ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক জ্বালানির ৬৫ শতাংশই এখন আমদানি করতে হচ্ছে। তেল, কয়লা ও গ্যাস– সব ক্ষেত্রেই বাড়ছে বিদেশনির্ভরতা। স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিকল্প জ্বালানি উৎসে বিনিয়োগ করা জরুরি।
আজ (শনিবার) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি: অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে পাঠ করা মূল প্রবন্ধে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
ড. তামিম বলেন, স্বল্পমেয়াদে জ্বালানি ঘাটতি মোকাবেলায় এলপিজি কার্যকর সমাধান হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোই টেকসই পথ। তিনি আরও জানান, গত ১০ বছরে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ প্রতিবছর গড়ে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে কমেছে। বর্তমানে তা বছরে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে হ্রাস পাচ্ছে। নতুন উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ তেমন কার্যকর হয়নি। গ্যাস আমদানির অবকাঠামোও সীমিত। এখন দুটি ভাসমান গ্যাস টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে সর্বোচ্চ ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা সম্ভব।
ড. তামিম বলেন, নিজস্ব উৎস থেকেও গ্যাস সরবরাহ কমছে। আমদানিও সীমিত। ফলে বড় ধরনের জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের গ্যাস সরবরাহের বড় অংশ আসে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে, যা এখন প্রায় ‘লাইফের শেষ পর্যায়ে’ রয়েছে। বর্তমানে দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, অথচ সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৫০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে বিকল্প জ্বালানি উৎস হিসেবে এলপিজি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, শিল্প, বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি খাতে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। শুধুমাত্র শিল্প খাতেই মোট এনার্জি ব্যবহারের ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশই গ্যাসনির্ভর। এ অবস্থায় এলপিজি শিল্প, পরিবহন, বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি ব্যবহারে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, এলপিজি বাংলাদেশের একমাত্র জ্বালানি যা কখনো সরকারিভাবে ভর্তুকি পায়নি। তবু বাজার-চালিত খাত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২২টি কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করছে। এর মধ্যে বড় বাজার অংশীদার হলো বসুন্ধরা, প্রিমিয়ার, যমুনা ও ফ্রেশ। দেশে বছরে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে, যা সাত বছর আগে এক লাখ টনেরও কম ছিল।
ড. তামিম জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও শিল্প খাতে গ্যাসের বর্তমান ঘাটতির প্রায় ৩০ শতাংশ এলপিজি দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সমমানের এলপিজি সরবরাহ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে। কিন্তু এলপিজি খাতে দ্রুত বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তা দিলে এক বছরের মধ্যেই সরবরাহ সক্ষমতা দ্বিগুণ করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।