প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নবম জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন বৈঠক। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে এমন উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক বৈঠক বসলো। ফলে এ সভাটিকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আজ (সোমবার) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে। কৃষি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিমান ও সমুদ্র যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই বৈঠক শুধু দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নয়, জনগণের কল্যাণের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “কৃষি, ট্রেড, কমার্স, আইটি ও খাদ্য খাতে যে আলোচনা হয়েছে, তা সরাসরি দুই দেশের মানুষের উপকারে আসবে।” তিনি আরও জানান, “আমরা শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতাও বাড়াতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করলে পুরো অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”
বৈঠকে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। বিশেষ করে কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে যৌথ গবেষণা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বিমান ও সমুদ্র যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সংযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারেও দুই পক্ষ আগ্রহ দেখায়।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। তিনি বলেন, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার তুলনায় খুবই কম। “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগোষ্ঠী বিশাল এবং পরস্পরের অর্থনীতিকে পরিপূরক করতে পারে,” বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, পাকিস্তান কৃষি ও জ্বালানি খাতে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র খুঁজছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস ও অন্যান্য শিল্পপণ্য আমদানির সুযোগও বাড়ানো হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে। তার মতে, বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও আলোচনা দ্রুত বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগ শক্তিশালী হবে। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষই একে অপরের আতিথেয়তা ও সহযোগিতার প্রশংসা করে। পাকিস্তান প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আশা প্রকাশ করে যে, এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, জেইসি বৈঠক শুধু দুই দেশের নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর সঙ্গেও এমন পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
সব মিলিয়ে, প্রায় দুই যুগ পর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ–পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের এই বৈঠক উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করেছে। কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের উন্নয়নই এই সভার মূল সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

