বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) দেশের সমুদ্রপথে নতুন ইতিহাস গড়ছে। একসময় লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি এখন রেকর্ড মুনাফায় পৌঁছে গেছে। এতটাই যে, এখন তারা ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিজেদের অর্থেই প্রতি বছর একটি করে নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
বুধবার বিএসসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক জানান, “আমরা প্রতি বছর একটি করে নতুন জাহাজ কিনব—পুরো অর্থই আসবে আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে। ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত পাঁচটি নতুন জাহাজ যুক্ত হবে বহরে।”
এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়, যখন সংস্থাটি তার ৫৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রাজস্ব ও মুনাফা অর্জন করেছে। আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএসসির মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩০৬ কোটি টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। সাত বছরে এই বৃদ্ধির হার ১,৬৮৮ শতাংশ—অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।
রাজস্বও বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি, দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকায়। এমন আর্থিক সাফল্যের পরও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ রাখা হয়েছে আগের মতোই—২৫ শতাংশ।
বিএসসি বলছে, তাদের মুনাফা বৃদ্ধির মূল কারণ আন্তর্জাতিক শিপিং রেটের উল্লম্ফন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, এবং ক্ষতিগ্রস্ত দুটি ট্যাংকার বিক্রি থেকে মূলধনী আয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক শিপিং বাজারে ফ্রেইট রেট বাড়তে থাকে, যার সুফল পেয়েছে বাংলাদেশও।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “যুদ্ধের পর থেকেই আন্তর্জাতিক রুটে ভাড়ার হার অনেক বেড়েছে। এই সুযোগটিই বিএসসি ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে।”
একসময় সরকারি তহবিলের উপর নির্ভরশীল সংস্থাটি এখন নিজস্ব অর্থেই জাহাজ কিনছে। গত বছরই তারা প্রথমবারের মতো নিজেদের ৯৩৪ কোটি টাকার তহবিল ব্যবহার করে দুটি নতুন জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর একটি, বাংলার প্রগতি, ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আরেকটি, বাংলার নবযাত্রা, ডিসেম্বরের মধ্যে যোগ দেবে বহরে।
বর্তমানে বিএসসির বহরে আছে ছয়টি জাহাজ। তবে তাদের লক্ষ্য আরও বড়—পরবর্তী পাঁচ বছরে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে বহরকে শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশের উপস্থিতি বাড়ানো।
কমোডর মালেক বলেন, “শিপিং ব্যবসায় চাহিদা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা চাই এই সুযোগে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে। প্রতিটি নতুন জাহাজ মানে আরও রাজস্ব, আরও কর্মসংস্থান, আরও শক্তিশালী অর্থনীতি।”
এক দশক আগেও যেখানকার মুনাফা ছিল মাত্র ১৭ কোটি টাকা, এখন সেখানে ৩০০ কোটিরও বেশি। এমন রূপান্তরই প্রমাণ করে—দক্ষ ব্যবস্থাপনা আর দূরদর্শী পরিকল্পনা থাকলে রাষ্ট্রীয় সংস্থাও পারে নিজের ভাগ্য বদলাতে।

