বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজারের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রয়েছে। দেশে তৈরি পোশাকের বড় অংশই এই অঞ্চলে যায়। তবে ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ইইউতে বৃদ্ধির শীর্ষে থাকতে পারলো না।
এ সময়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি ১৩ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু প্রতিযোগী দেশ কম্বোডিয়া একই সময়ে ২২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছে। ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশও পিছিয়ে রয়েছে। তথ্য এসেছে ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটের বিশ্লেষণ থেকে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫২৫ কোটি ৫২ লাখ ইউরোর পোশাক আমদানি করেছে। ২০২৪ সালের একই সময়ে এটি ছিল ১ হাজার ৩৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ইউরো। বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩.১৭ শতাংশ।
প্রতিযোগী দেশ কম্বোডিয়ার আমদানি আরও দ্রুত বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে কম্বোডিয়া থেকে ইইউর পোশাক আমদানি হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৮৩ লাখ ইউরো। ২০২৪ সালে ছিল ২৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ইউরো। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি হয়েছে ২২.৫১ শতাংশ। ভিয়েতনাম থেকেও ইইউর আমদানি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হয়েছে ৩২৫ কোটি ৭১ লাখ ইউরো। ২০২৪ সালে সংখ্যা ছিল ২৮৫ কোটি ১২ লাখ ইউরো। বৃদ্ধির হার ১৪.২৪ শতাংশ।
পাকিস্তান থেকেও ইইউর পোশাক আমদানি বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি থেকে এসেছে ২৮৯ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। ২০২৪ সালে ছিল ২৫৪ কোটি ৬৩ লাখ ইউরো। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি ১৩.৭৭ শতাংশ। তিন প্রতিযোগী দেশ—কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান—ইইউতে নিজের অংশ বাড়িয়েছে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ শীর্ষ সরবরাহকারী হলেও বৃদ্ধির হার কম। সার্বিকভাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ইইউর মোট পোশাক আমদানি বেড়েছে ৭.১৪ শতাংশ। এ সময়ে দেশগুলো থেকে মোট আমদানি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি ইউরো। ২০২৪ সালে এটি ছিল প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি ইউরো।
বাংলাদেশের পরেই ইইউর পোশাক আমদানি বৃদ্ধিতে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, ১০.৬২ শতাংশ। শ্রীলংকা ১০.২৫ শতাংশ, চীন ৯.৮৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৬.৭৭ শতাংশ এবং মরক্কো ১ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছে। বিপরীতে তুরস্ক থেকে আমদানি কমেছে ৯.৮০ শতাংশ। বাংলাদেশের পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ইস্যুর কারণে অনেক দেশ ইউরোপের দিকে ঝুঁকেছে। বাংলাদেশ কৌশলগত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ট্রাম্প ট্যারিফের প্রভাব বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে। ইউরোপও এর বাইরে নয়। এখানে মূল্যস্ফীতি ও দামের চাপ বেড়েছে। কঠিন পরিবেশেও আমরা ভালো করছিলাম। কিন্তু যেসব দেশ আগেভাগেই ইউরোপে মনোযোগ দিয়েছে তারা নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে। বাংলাদেশ কোনো কৌশল গ্রহণ করেনি। তাই আমরা আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রফতানি বাজার ধরে রাখতে এখনই ভিন্ন গন্তব্যে কাজ করতে হবে। আমাদের আগের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে হবে। আমেরিকার চাপ থেকে বাঁচতে যেমন অন্য দেশ ইউরোপে জোর দিচ্ছে, আমাদেরও উচিত জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া—এসব বাজারে রফতানি বাড়ানো। একটি ভারসাম্যপূর্ণ রফতানি কৌশল থাকলে এত ধাক্কা লাগত না। ইউরোপে আমরা প্রায় ৫০ শতাংশ রফতানি করি। তাই পরিস্থিতি খারাপ হলে বিপদ বড় হবে। এখন পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

