সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি (সরকারি ক্রয় কমিটি) সম্প্রতি ৭টি বড় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মরক্কো থেকে সার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি অন্তর্ভুক্ত। অনুমোদিত মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকায়।
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে জানানো হয়, সরকারি পর্যায়ে চুক্তির (জি-টু-জি) আওতায় সার আমদানির দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। প্রথম প্রস্তাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড’ থেকে ৩য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৪০৯.৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ২০১ কোটি ১৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা খরচ হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে মরক্কোর ‘ওসিপি নিউট্রিক্রপস’ থেকে ৯ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৬৮২.৬৭ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ৩৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
একই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস হুইট এসোসিয়েটসের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড’ গম সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন গম ৩১২.২৫ ডলারে কিনতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ৮৪২ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এই অনুমোদিত চুক্তিগুলো দেশের সার ও গমের সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
টিসিবির জন্য সয়াবিন ও রাইস ব্রান তেল ক্রয়:
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে টিসিবির (ত্রাণ ও সামাজিক কল্যাণ সংস্থা) জন্য দুটি বড় তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে স্থানীয় উৎস থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং ১ কোটি লিটার রাইস ব্রান তেল কেনা হবে। প্রথম প্রস্তাবে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৯ টাকা ৮৫ পয়সা দরে ক্রয় করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৯ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সরবরাহ করবে ‘সোনারগাঁও সীডস ক্রাশিং শিলস লিমিটেড’।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে ১ কোটি লিটার রাইস ব্রান তেল প্রতি লিটার ১৬১ টাকায় কেনা হবে। মোট ব্যয় হবে ১৬১ কোটি টাকা। এর সরবরাহভার দুই প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করবে। ‘তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ সরবরাহ করবে ৩০ লাখ লিটার এবং ‘মজুমদার ব্রান অয়েল মিলস লিমিটেড’ সরবরাহ করবে ৭০ লাখ লিটার। এই ক্রয় চুক্তি দেশের তেল সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং ভোক্তাদের জন্য দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
আড়িয়াল খাঁ নদীতে মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণে ব্যয় ১৩৫২ কোটি টাকা:
সরকারি ক্রয় বৈঠকে ‘রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মুলাদি-হিজলা মহাসড়ক (জেড-৮০৩৪)’ প্রকল্পের ৮ম কিলোমিটারে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণের জন্য দুটি পূর্তকাজ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মীরগঞ্জ প্রধান সেতু, মীরগঞ্জ সেতু, অ্যাপ্রোচ সড়ক ও আনুষঙ্গিক কাজ অন্তর্ভুক্ত। প্রথম দরপত্রের কাজটি সম্পাদনা করবে ‘চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন’। এর ব্যয় হবে ১ হাজার ৭২ কোটি ৩২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
দ্বিতীয় পূর্ত কাজের ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এটি যৌথভাবে সম্পন্ন করবে জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেড, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড, কাটাহীরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান দেব কনসালট্যান্টস লিমিটেড, নিপ্পন কোয়ি বাংলাদেশ, ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টস লিমিটেড, কেএস কনসালট্যান্টস লিমিটেড ও অনুসন্ধানী ক্রীডস লিমিটেড। মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণ শেষ হলে অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং বাণিজ্য ও যাতায়াত সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

