চীনের বার্ষিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত প্রথমবারের মতো এক ট্রিলিয়ন ডলারের অঙ্ক ছাড়িয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ গত নভেম্বরে রপ্তানিতে আগের মাসের মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠা। যদিও এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক তলানিতে নেমে এসেছে, তা সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি।
জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন সরকার সোমবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের মোট রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে আমদানি কমেছে ০.৬ শতাংশ। এর ফলে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১.০৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। ট্রেড ডেটা মনিটরের হিসাব অনুযায়ী, এটি গত বছরের রেকর্ড ৯৯২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
ডলারের ভিত্তিতে নভেম্বরে রপ্তানি ৫.৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মূল চালিকাশক্তি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে চীনা পণ্যের চাহিদা। এটি অক্টোবরের ১.১ শতাংশ সংকোচনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। রয়টার্সের জরিপ পূর্বাভাস দিয়েছিল রপ্তানি আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, তবে বাস্তবে তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। আমদানি বৃদ্ধিও হয়েছে মাত্র ১.৯ শতাংশ, যা রয়টার্সের পূর্বাভাস ৪ শতাংশের চেয়ে কম।
নমুরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ লু টিং বলেন, “মাসিক তথ্য খুবই পরিবর্তনশীল। অক্টোবরের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কম ছিল, সেপ্টেম্বরের সংখ্যা বেশি। তাই একক মাসের ওঠানামা নিয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করা ঠিক হবে না।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমেছে। এটি টানা অষ্টম মাসিক পতন এবং অক্টোবরের ২৫ শতাংশ পতনের চেয়ে বেশি। গত অক্টোবরের শেষের দিকে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় সাক্ষাৎ করে বাণিজ্য যুদ্ধ স্থগিত রাখার ব্যাপারে সম্মত হলেও মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২৪ নভেম্বরের ফোনালাপেও দুই নেতা সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার সদিচ্ছা পুনরায় নিশ্চিত করেছেন। বছরের পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও চীনের সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধির প্রধান উপাদান হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। আবাসন খাতে মন্দা এবং কম ঘরোয়া ব্যয়ও এই বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করেছে।
নমুরার লু টিং আরও জানান, “সব মিলিয়ে, চীনের রপ্তানি তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে ধরে রেখেছে। এই স্থিতিশীলতা আগামী বছরের মোট রপ্তানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় ৪ শতাংশে স্থির করার ভিত্তি তৈরি করেছে। এটি সামান্য মন্থর হলেও, ৪ শতাংশের বৃদ্ধি বৈশ্বিক বাণিজ্যের গড় বৃদ্ধির চেয়ে বেশি।” লু বলেন, ২০২৬ সালে চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি দেশটির উৎপাদন শক্তির ওপর নির্ভর করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাণিজ্য বাধার কারণে বৃদ্ধির গতি কিছুটা ধীর হতে পারে।

