রমজানকে সামনে রেখে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৭.৫ বিলিয়ন ডলার বা ৭৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ব্যালান্স অব পেমেন্টসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ২০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৫০ কোটি ডলারে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ঘাটতি ছিল ৫৭০ কোটি ডলার।
বাণিজ্য ভারসাম্য ব্যালান্স অব পেমেন্টের অন্যতম প্রধান অংশ। এটি দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবধানকে প্রতিফলিত করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই চার মাসে আমদানির পরিমাণ হয়েছে ২,২১১ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৫ শতাংশ বেশি। একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১,৪৫০ কোটি ডলার। আমদানি-রপ্তানির এই ব্যবধানের কারণে ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে সাধারণত মাসিক আমদানি ৫০০ কোটি ডলারের নিচে থাকলেও, গত অক্টোবর মাসে তা বেড়ে প্রায় ৫৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আমদানির বৃদ্ধির মূল কারণ পেট্রোলিয়াম ও সার আমদানি বৃদ্ধি এবং রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রমজানে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, মটর ডাল ও খেজুরের চাহিদা বাড়ে। তাই সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান দেখায়, এই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানি ৩৬ শতাংশ, চিনি ১১ শতাংশ, মসুর ডাল ৮৭ শতাংশ, ছোলা ২৭ শতাংশ, মটর ডাল ২৯৪ শতাংশ এবং খেজুর ২৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল ও সার আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতির প্রভাব চলতি হিসাবেও পড়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৪৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৬৪০ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও মূলত আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়েছে। চলতি হিসাব দেশের পণ্য ও সেবা বাণিজ্য, বিদেশ থেকে আয় ও প্রবাসী আয়সহ মোট লেনদেনকে দেখায়। তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০১০ কোটি ডলার, যা গত বছরের ৮৯০ কোটি ডলারের তুলনায় বেশি। রেমিট্যান্স এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও মূলত বাণিজ্য ঘাটতির কারণে চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়েছে।
কর্মকর্তাদের মতে, আমদানি বৃদ্ধিই এই ঘাটতির মূল কারণ। বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশের ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট উদ্বৃত্ত হয়েছে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি মূলত ট্রেড ক্রেডিট (বাণিজ্য ঋণ) এবং মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বৃদ্ধির কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল, এবার জুলাই-অক্টোবর সময়ে ট্রেড ক্রেডিট এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রবাহ বাড়ায় ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্টের ভিত্তি মজবুত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ট্রেড ক্রেডিট ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্টের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। আমদানি বাড়ার সঙ্গে ক্রেডিট ফিন্যান্সিংও বেড়েছে, ফলে ট্রেড ক্রেডিটে ইনফ্লো দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণত আউটফ্লো থাকে।’

