সাম্প্রতিক অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে হলেও, এর মূল কারণ নতুন করে অপরাধ বৃদ্ধি নয়। বরং দীর্ঘদিন দমন করা ও রেকর্ডবিহীন থাকা বহু হত্যা মামলা পুনঃনথিভুক্ত হওয়ায় এই চিত্র তৈরি হয়েছে।
অপরদিকে দাঙ্গা, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, গত ১৩ মাসে অন্তত এক হাজার ১৩০টি হত্যার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এর বড় অংশ শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত হলেও, সেসময় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল ও পুলিশের অনীহার কারণে মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সেসব মামলার রেকর্ড উন্মুক্ত হয়েছে। ফলে হত্যার পরিসংখ্যান তুলনামূলক বেশি দেখালেও তা আসলে দীর্ঘদিনের চাপা পড়া অপরাধের হিসাব। অন্যদিকে, অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
- ডাকাতি: ২০২৪ সালের ১ হাজার ৪০৫ থেকে ২০২৫ সালে কমে ১ হাজার ৩১৪-এ।
- আইনশৃঙ্খলা ব্যাহতকরণ (দ্রুত বিচার) আইন: ২০২৪ সালের ১ হাজার ২২৬ থেকে ২০২৫ সালে নেমে ৬৫১-এ।
- দাঙ্গা: ২০২৪ সালের ১২৫ থেকে ২০২৫ সালে ৫৯-এ।
- চুরি: ২০২৪ সালের ৮ হাজার ৬৫২ থেকে ২০২৫ সালে কমে ৬ হাজার ৩৫৪-এ।
প্রেস উইংয়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই পরিবর্তন দুইটি বিষয় নির্দেশ করছে। এক, দীর্ঘদিন দমন করা মামলা উন্মুক্ত হওয়ায় হত্যার পরিসংখ্যান বেড়েছে। দুই, অন্যান্য অপরাধের হ্রাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতির প্রতিফলন। পূর্বে রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও ভয়ের পরিবেশে অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে পারতেন না। পুলিশের পক্ষ থেকেও অনেক ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হতো। বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। নাগরিকরা ভয়ভীতিমুক্তভাবে মামলা দায়ের করতে পারছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতাপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ফলে, পুরোনো অপরাধের রেকর্ড যোগ হওয়ায় হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ বেশি মনে হলেও, চুরি, ডাকাতি ও দাঙ্গার হ্রাস সমাজে নিরাপত্তাবোধ জোরদার করেছে। সামগ্রিকভাবে এ পরিবর্তন দেশে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিচ্ছে।