মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৮ মামলায় ১৫২ জন পলাতক আসামিকে ধরতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি আমলারা এই মামলার আওতায় রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম, খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে মোট ৪৭৭টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর গত অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। মামলাগুলোয় মোট ২৩৬ জন আসামি রয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বর্তমানে চারটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। বাকি তিনটি হলো–
- রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা,
- আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানো,
- রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় ৪৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। চানখাঁরপুলের মামলায় ১৩ জনের, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আশুলিয়ার মামলায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। বিচার শুরু হওয়া চার মামলায় মোট ৫৭ জন আসামি রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত সংস্থা জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুতেই বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় ছবি সহ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে অনেকেই দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ দেশের ভেতরেই লুকিয়ে আছেন। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, “পলাতক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যারা ভারতে পালিয়ে আছেন, তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।”
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিচার শুরু হওয়ার আদেশ দেন। অন্য দুই আসামি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আল-মামুন দায় স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ হয়েছেন এবং কারাগারে রয়েছেন। বাকিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
গণঅভ্যুত্থানের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুলে শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলায় সাবেক ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিচার শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আট জন পলাতক। ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জন পলাতক। ইতোমধ্যে পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।