কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের দাবিতে বাসায় গেলে সাকিবের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ২০২৩ সালের ১৯ জুন সাকিব ফেসবুকের একটি গ্রুপে পাত্রী চেয়ে পোস্ট দেন। সেই পোস্টের মাধ্যমে পরিচয় হয় তাদের। পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাকিব তাঁর স্ত্রী ও সন্তান থাকার বিষয় গোপন রেখে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। দুই পরিবারেরও এই সম্পর্ক সম্পর্কে জানা ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর সাকিব শিক্ষা ক্যাডারে চাকরিরত এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং পরে বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা একসঙ্গে ভৈরবেই থাকছেন।
ভুক্তভোগী জানান, ধর্ষণের অভিযোগে গত ২০ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে ধর্ষণ মামলার আবেদন করেন তিনি। পরে ট্রাইব্যুনাল শাহবাগ থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, তদন্তে সুবিধা নিতে সাকিব চাপ সৃষ্টি করছেন। ন্যায় বিচার পেতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সাকিবের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছেন—হত্যাচেষ্টা, নারী নির্যাতন ও বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ। হত্যাচেষ্টার মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটিকে নিয়ে লুকোচুরি ও হাসি-তামাশা করছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে সাকিব অভিযোগকারী নারীকেই চেনেন না বলে দাবি করেন। পরে তিনি সমকালকে বলেন, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফেসবুকে পাত্রী চেয়ে পোস্ট করেছিলেন। সেখানে অভিযোগকারী নারী জীবনবৃত্তান্ত পাঠান। পরিচয়ের পর কিছুদিন কথা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিবের বোন বিয়ে দেখেন, কিন্তু অভিযোগকারী নারীর পছন্দ না হওয়ায় বিয়ে হয়নি।
বাসায় যাতায়াত ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে সাকিব বলেন, সেগুলো ‘মেকি’। এ বিষয়ে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বলেন, সামাজিকভাবে হেনস্তা করতে অভিযোগকারী নারী এসব করছেন।
সাকিবের প্রথম স্ত্রী ইসরাত রহমান নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি কয়েক মাস জেল খেটেছেন। বিগত সরকারের আমলে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পদাবনতি পর তিনি আবার চাকরিতে যোগ দেন।