রাজধানীর রমনা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় নিজেকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে ৪৮ ঘণ্টা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ সোমবার এই আদেশ দেন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় পুলিশ এনায়েত করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি শামসুদ্দোহা আদালতে বলেন, আসামি নিজেকে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি ‘র’-এর এজেন্ট। তিনি বাংলাদেশে এসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। এ সময় তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় আরও তথ্য পাওয়া যাবে। শামসুদ্দোহা আরও বলেন, এনায়েত করিমসহ অন্যরা কীভাবে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তা জানতে তাঁকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপর দিকে এনায়েত করিমের আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেন, তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন এবং ১৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। দেশে আসার পর গুলশানে অবস্থান করেছেন। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। শুনানি শেষে আদালত ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয় এবং ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ জানায়, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে তাকে আটক করা হয়। জব্দ করা পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, মার্কিন সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান। এ পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি দেশের বাইরে একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম জানিয়েছেন, নতুন জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বর্তমান সরকার পরিবর্তন করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাজুক অবস্থায় এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে তিনি সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গেও গোপন বৈঠক করেছেন।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনায়েত করিম চৌধুরী ৬ সেপ্টেম্বর সকালেই নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছেন। প্রথম দুই দিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন, পরবর্তী কয়েক দিন গুলশানে অবস্থান করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২০০৪ সালে সেখানে নাগরিকত্ব পান। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও (২০০১-২০০৬) একবার তাকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনও তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল।