রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই কার্যক্রমকে স্থানীয়রা অমানবিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের ঘরবাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও উচ্ছেদ আইনি আদেশ অনুযায়ী হয়েছে, মানবিক বিবেচনা শূন্যের কোঠায় ছিল।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের জন্য জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রক্রিয়া এড়িয়ে দখলদার চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া কোল পরিবারের সদস্যদের দাবি, জমির আসল মালিক তাদের ‘জাত-ভাই’ ছিলেন, কিন্তু জাল দলিলের মাধ্যমে ভূমি দখলদার চক্র মালিকানা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে গরিব কোল পরিবারগুলো আদালতে যথাযথ অংশ নিতে না পারায় একতরফা রায় তাদের বিরুদ্ধেই গেছে। গত সোমবার সেই রায়ের ভিত্তিতে পরিবারগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে।
দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করা পরিবারগুলো ভিটা ছাড়তে মাত্র দুই ঘণ্টার সময় চেয়েও পায়নি। উচ্ছেদকারী দল, আদালতের প্রতিনিধি ও পুলিশ এই মানবিক আবেদন উপেক্ষা করেছে। ঘরবাড়ি, গরু বিক্রির অর্থ, আসবাবপত্র, রান্না করা খাবার সবই মাটির নিচে চাপা পড়ে। পরে পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নেয়।
আদালত প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাদীপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি, কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উচ্ছেদকারী দলের দায়িত্ব ছিল কেবল দখল বুঝিয়ে দেওয়া নয়, মানবিক বিপর্যয় এড়ানো। গরিব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারকে অভুক্ত অবস্থায় বাঁশঝাড়ে ফেলা সভ্য সমাজে আইন প্রয়োগের উদাহরণ হতে পারে না।
উচ্ছেদের দুই দিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাকে আগে জানানো হয়নি। ফলে আইনি আদেশের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে চাল ও অল্প অর্থসহায়তা দিয়েছে। পুনর্বাসনের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ। নারী ও শিশুসহ পরিবারগুলো এখন কোথায় যাবে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
সমতলের ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনকে অপব্যবহার করে যে চক্র পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হোক। আশা করা যায়, কোল পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

