বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় অনেক মানুষকে পূর্বশত্রুতা বা হয়রানির কারণে আসামি করা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে এসব মামলার প্রায় দেড় হাজার আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানার তদন্ত কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ১৬৫টি মামলার ১ হাজার ৪৫৬ জন আসামির সঙ্গে অভিযোগের কোনো সম্পর্ক পাননি। এরপর তারা অব্যাহতির জন্য আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত পরে এই ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আবেদন করেছেন ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধিত ধারার ক্ষমতাবলে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, “এটি চলমান প্রক্রিয়া। সারা দেশে এই কার্যক্রম চলছে।”
ডিএমপির সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় ডিএমপির আট বিভাগের ৫০টি থানায় অসংখ্য মামলা হয়েছে। অনেককে পূর্বশত্রুতা বা হয়রানির কারণে আসামি করা হয়েছিল। নিরপরাধ ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধিত ধারার মাধ্যমে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ থানায় দায়ের করা ১৬৫টি মামলায় ১ হাজার ৪৫৬ জনের অব্যাহতির জন্য অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আদালত পরে তাদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। তবে মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। তদন্ত শেষে প্রতিটি মামলার জন্য নতুন প্রতিবেদন দাখিল করা হবে, যাতে ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নাম উল্লেখ থাকবে।
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের পর এটি ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে জারি হয়। নতুন অধ্যাদেশে ১৭৩-ক নামে একটি ধারা যুক্ত হয়েছে, শিরোনাম ‘অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন ইত্যাদি’। এতে বলা হয়েছে, তদন্ত চলাকালীন যেকোনো সময়ে পুলিশ কমিশনার, জেলার পুলিশ সুপার বা সমমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারবেন। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকলে আদালত তাকে অস্থায়ীভাবে মামলার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিতে পারে। তবে তদন্ত শেষে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
গত বছরের ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা পুলিশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭) এই ধারার সুবিধা নিয়ে অব্যাহতি পেয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন জানান, ফাইয়াজের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তদন্তের জন্য সময় প্রয়োজন হওয়ায় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে নিরপরাধ মানুষকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে কাজ চলছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখছেন। কোনো অপরাধী যাতে এই সুযোগ নাও নিতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “মামলায় আসামির নাম দেন বাদী। পুলিশ তদন্ত করে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাদের প্রতিবেদন দেয়। যাদের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তাদের অব্যাহতি দেয়। ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের ফলে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দিয়ে সারা দেশে নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।”

