নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বিচার বিভাগে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য গত ১ নভেম্বর ২০২৫ বাংলাদেশ সফরে আসেন।
সফরের সময় বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় সংস্কার এবং এর চ্যালেঞ্জ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। গত রবিবার সকালে নেপালের প্রধান বিচারপতি সুপ্রীম কোর্টে আগমন করলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উষ্ণভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সফরের সময় নেপালের প্রধান বিচারপতি সুপ্রীম কোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। বিশেষ করে “Supreme Court Helpline” কার্যক্রমে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
সফরের প্রথমদিন সকাল ১১:৩০ মিনিটে তিনি আপিল বিভাগের ১ নম্বর এজলাসে বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করেন। এসময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ ৭ জন আপিল বিভাগের বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন। নেপালের প্রধান বিচারপতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
গত ২ নভেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে “Discussion on Roadmap, Roadshow Legislative Changes, Judicial Integrity and Partnership Building” শীর্ষক আলোচনাসভায় নেপালের প্রধান বিচারপতি অংশ নেন। একই দিনে তিনি “Delivering Justice while Managing Crisis” শীর্ষক আলোচনাসভা এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “Workshop on Digitalization, Gender Justice, Specialization of Courts, Judicial Independence and Integrity” কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
গত ৩ নভেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত “Workshop: Jurisprudence in Transitional Contexts, Exchange” শীর্ষক সভায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অনিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরের “সাংবিধানিক বিচ্যুতি” এর ফলে বিচার বিভাগের ওপর তিনটি মূল দায়িত্ব এসেছে:
১. সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
২. সরকারের আইনগত ভিত্তি কার্যকরে সহায়তা
৩. বিচার বিভাগের স্বায়ত্বশাসন পুনরুদ্ধার
তিনি বলেন, সুপ্রীম কোর্ট ঐতিহাসিক রায়, অধ্যাদেশ ও নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে সংবিধানবাদ পুনরুজ্জীবিত করেছে। গত ১৬ মাসের মাননির্ধারক এই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতের যে কোনো সরকার অনুসরণ করতে পারবে। তিনি বিচার বিভাগীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন দেশের সাথে “J2J diplomacy” শক্তিশালী করার আহ্বান জানান, যাতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
নেপালের প্রধান বিচারপতি ৩ নভেম্বর “ল’ রিপোরটার্স ফোরাম” এবং “সুপ্রীম কোর্ট রিপোরটার্স ফোরাম”-এর মোট ১০ জন সদস্যের সঙ্গে “Communications and Voices from the Media; Staying relevant; Social Media Use Protocol” শীর্ষক সভায় অংশ নেন। এই সভায় বাংলাদেশের বিচার সংস্কার যাত্রায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়, যা নেপালের বিচার সংস্কারে সহায়ক হতে পারে।
নেপালের প্রধান বিচারপতির সফরসঙ্গী ছিলেন Hon’ble Justice Sapana Pradhan Malla, Hon’ble Justice Binod Sharma এবং Chief Registrar Bimal Poudel। সফরের শেষে আজ তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

