সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার সংক্রান্ত দুইটি আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
রিটটি দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা জেলা জজ আদালতের ১৩ জন আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ। গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রিটকারীরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদ ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।
রিটকারীদের পক্ষে আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান-প্রদত্ত অধিকার।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩–এ বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবে বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। ফলে আইন দুটি সংবিধানবিরোধী।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিচারকদের তুলনায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান অনেক নিচে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে—
- ভারতে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৩.৮৯ লাখ টাকা, অন্যান্য বিচারক পান প্রায় ৩.৪৭ লাখ টাকা।
- পাকিস্তানে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৫.১৭ লাখ, অন্যান্য বিচারক ৪.৭৪ লাখ টাকা।
- ভুটানে প্রধান বিচারপতি পান ১.৯১ থেকে ২.১০ লাখ, অন্যান্য বিচারক সর্বোচ্চ ১.৮০ লাখ টাকা।
- মালদ্বীপে প্রধান বিচারপতি পান প্রায় ৭ লাখ, অন্যান্য বিচারক ৬.৮৩ লাখ টাকা।
- শ্রীলঙ্কায় প্রধান বিচারপতির বেতন ১.০৬ থেকে ১.৩৪ লাখ, অন্যান্য বিচারক সর্বোচ্চ ১.২৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মাসিক মাত্র ১.১০ লাখ টাকা, আপিল বিভাগের বিচারক ১.০৫ লাখ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ৯৫ হাজার টাকা বেতন পান। রিটকারীদের মতে, এই বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিটে আরও বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতার বিভাজন নীতি উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট তার সীমা অতিক্রম করে এই আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এতে বিচারপতিদের জন্য এক বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো তৈরি হয়েছে, যা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার প্রদানের সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করছে। এর ফলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারও প্রভাবিত হচ্ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও গবেষণার ঘাটতি পূরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) বাংলাদেশেও প্রত্যেক বিচারকের অধীনে একজন করে ল’ কাম রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট নিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত।

