‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ’ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে সরকার। এতে গুম করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর আজ অধ্যাদেশটি অনুমোদন করা হয়েছে। এতে গুমকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে চলমান অপরাধ (কন্টিনিউ অফেন্স) হিসেবে এবং মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, গোপন আটককেন্দ্র—যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত—ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তদন্ত কমিশনকে গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ এবং আইনগত সহায়তার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকারের লক্ষ্যে একটি তহবিল এবং তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম জানান, মিটিংয়ে আরো কয়েকটি বিষয় আলোচিত হয়েছে—এর মধ্যে জাতীয় লজিস্টিক নীতির চূড়ান্ত অনুমোদন এবং ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন অন্যতম। জাতীয় নগরনীতি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, “গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ ২০২৫ আজ অনুমোদন হয়েছে। শেখ হাসিনার সময় হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। সেই কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার, যার মধ্যে নিশ্চিতভাবে ৪০০-এর বেশি ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে। দেশে শত শত আয়নাঘর ছিল, যেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের রাখা হতো। অনেকে ফিরে এসেছেন, অনেকে আর ফেরেননি। বিএনপির অনেক কর্মী আজও নিখোঁজ।”
তিনি আরো জানান, “গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন International Convention for the Protection of All Persons from Enforced Disappearance-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করা হয়েছে। গত বছর ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদ এ কনভেনশন অনুমোদন করে বাংলাদেশকে এর অংশীদার করে। এই ঐতিহাসিক আইন কার্যকর হলে দেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার গুমের রাজত্ব কায়েম করতে পারবে না, কোনো নতুন আয়নাঘরও তৈরি হবে না।”

