মেহেরপুর জেলায় ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর আওতায় দেশের প্রথম মামলা দায়ের হয়েছে। গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুজিবনগর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা আন্তর্জাতিক অনলাইন ক্যাসিনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে কোটি টাকার লেনদেন করত। বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ পাচার হতো। তারা ফেসবুক ও টেলিগ্রামে দ্রুত আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মুজিবনগরের কোমরপুর গ্রামের মুকুল, শুভ (২২), প্রসেনজিৎ হালদার (২৫), আক্তারুজ্জামান ফিলসন, শামীম (৩০), মহাজনপুর গ্রামের মিঠু (৪০) ও সোহাগ (৩৮), গোপালপুর গ্রামের বদরুদ্দৌজা রয়েল (৩৭), রসিকপুর গ্রামের সিরাজ (৩৬), মোনাখালী গ্রামের মাহফুজুর রহমান (২১), গাংনী উপজেলার গাড়াডো গ্রামের তুলিপ হোসেন (৩০), সদর উপজেলার বামনপাড়ার রঞ্জু ও রাজু, কোর্ট পাড়ার সাজু, শেখ পাড়ার পনির (২৪) এবং স্টেডিয়াম পাড়ার বাপ্পি (৩০)।
মুজিবনগর থানা সূত্রে জানা যায়, ৩ নভেম্বর বিকেল ৪.৩০টায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কোমরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন দেলোয়ার হোসেন দিপু (৪০), সুমন আলী (৩৮) ও সাকিবুল ইসলাম (২৩)। তাদের কাছ থেকে একটি টয়োটা প্রিমিও গাড়ি, চারটি স্মার্টফোন, মোবাইল ব্যাংকিং সিম, লেনদেন সংক্রান্ত নথি ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রমাণ উদ্ধার করা হয়। দিপুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরও উদ্ধার করা হয় একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের তিনটি কার্ড এবং দুটি পেনড্রাইভ। অভিযান পরিচালনা করেন ডিবি শাখার পরিদর্শক মুহাদ্দিদ মোর্শেদ চৌধুরী ও শিমুল কুমার দাস।
ডিবি জানায়, এই চক্র মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও আশপাশের এলাকায় অনলাইন জুয়া ও অবৈধ ই-লেনদেনের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত। গ্রেপ্তার তিনজনই মামলার তালিকাভুক্ত আসামি। মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে শতাধিক যুবক নিঃস্ব হয়েছেন। এছাড়া বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তার স্ত্রী ও যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোনালিসা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা, পুলিশের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির কয়েকজন নেতার তত্ত্বাবধানে মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার ব্যবসা চলছে। সরকারের তৎপরতায় ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ কার্যকর করা হয়েছে। এর আওতায় মুজিবনগর থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হলো।

