সংবিধান থেকে বিলুপ্ত হওয়া নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবশেষে পুনর্বহাল করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগ পূর্ববর্তী বাতিলের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করেন, যার ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে ফিরে আসে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। অন্যান্য বিচারপতি ছিলেন মো. আশফাকুল ইসলাম, জুবায়ের রহমান চৌধুরী, মো. রেজাউল হক, এস এম ইমদাদুল হক, এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং ফারাহ মাহবুব। রায় ঘোষণার সময় এজলাস কক্ষ আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
রায়ে বলা হয়েছে যে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। আর চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।
গত ১১ নভেম্বর শুনানি শেষে ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত হয়। শুনানিতে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য আপিলকারীদের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে ব্যবস্থা ফিরে এলেও আগামীর নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আয়োজন করতে হবে এবং চতুর্দশ নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের লক্ষ্যে নতুন আইনি লড়াই শুরু হয়। চলতি বছরের ২৭ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আপিলের অনুমতি দেন। এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন নাগরিক, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার পৃথকভাবে আপিল করেন।
ঐতিহাসিক এই রায় দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিতর্কেরও গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর আইনি ব্যাখ্যার বিস্তারিত জানা যাবে।

