বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়েছে।
আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেয়। আপিলে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল করার দাবি করা হয়েছে। আপিল দায়ের করেন রিটকারী সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আদালত সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনেন। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোটা বাতিল করা হয়নি।
হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেছেন, গণতন্ত্র আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। এটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিকশিত হয়। তবে দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। এর ফলে ২০০৬ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটে।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছে। হাইকোর্টের বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী।
হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদ, এবং ৭ক, ৭খ ও ৪৪ (২) ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন। আদালত বলেছে, অনুচ্ছেদগুলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হয়নি। বাকি বিধানগুলো জাতীয় সংসদ আইন অনুযায়ী জনগণের মতামত নিয়ে সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবে। এর মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক স্বীকৃতি এবং ২৬ মার্চের ভাষণ সংক্রান্ত বিষয়ও রয়েছে।
গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই তা বাতিল করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়েছে।
রায়ের মাধ্যমে ৭ক, ৭খ ও ৪৪ (২) অনুচ্ছেদও বাতিল করা হয়েছে। ৭ক ধারা সংবিধান বাতিল বা স্থগিতকরণের অপরাধ সংক্রান্ত, ৭খ ধারা সংবিধানের মৌলিক বিধান সংশোধন অযোগ্য করার বিষয়ে, এবং ৪৪ (২) ধারা মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা সীমার মধ্যে ব্যবহার সম্পর্কিত।
আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিটকারী সুজনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। এছাড়া বিভিন্ন আবেদনকারী ও ইন্টারভেনররা উপস্থিত ছিলেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ৫০ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছিল।

