সংবিধান পরিবর্তনকে হুমকি হিসেবে নয় বরং গণতান্ত্রিক বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, জনগণের সংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান পরিবর্তন করার এবং বিচার বিভাগকে এই বিষয়টি গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তিনটি প্রধান অঙ্গ—আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মাধ্যমে। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট ভবন শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং নাগরিক জীবনের এই তিনটি ভিত্তির অন্যতম প্রতীক। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে জনগণের সংবিধানিক ক্ষমতার বিষয়টি হুমকি হিসেবে না দেখে গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একক পদ বা ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং ন্যায়বিচার, ভারসাম্য এবং দূরদর্শিতার সঙ্গে জনগণকে সেবা দেওয়ার সম্মিলিত অঙ্গীকারেই বিচার বিভাগের প্রকৃত শক্তি নিহিত। সাধারণত রায়ের কৃতিত্ব বিচারকদের দেওয়া হলেও রায়ের ভাষা, যুক্তি এবং কাঠামো নির্মাণে আইনজীবীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের স্থিরতা, সংযম, সততা এবং সাহসই একটি জাতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থিতিশীলতার উৎস হতে পারে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুরুতে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের কর্মজীবন ও অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করবেন। তিনি ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডাম কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গেও কাজ করেছেন।
তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা জেলা আদালতে এবং ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান এবং দুই বছর পর স্থায়ী বিচারপতি হন।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রথিতযশা আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ এবং ভাষাসৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদের সন্তান। তার পিতা দুই দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

