বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন। কারণ? ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফকে ঘিরে তৈরি হওয়া তীব্র বিতর্ক ও অভ্যন্তরীণ চাপ।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে অসদাচরণ করেন কয়েকজন পর্ষদ সদস্য। বৈঠকে তাঁকে অপসারণের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এর পরদিনই, মোশারফ হোসেন নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং পদত্যাগপত্র জমা দেন।
মূল ইস্যুটি ছিল একটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান—সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিলসকে দেওয়া বিশাল অঙ্কের ঋণের সুদ মওকুফ। প্রতিষ্ঠানটির নামে ব্যাংকে প্রায় ৮৮ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে দেওয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় পরিচালনা পর্ষদ। এখন সেই সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য।
তবে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তে রাজি ছিলেন না এমডি মোশারফ হোসেন। কারণ, ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়া অতীতে সুরুজ মিয়া স্পিনিংয়ের উপদেষ্টা ছিলেন, এবং তিনিও পর্ষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের সঙ্গে মিলে সুদ মওকুফে জোরালো ভূমিকা রাখেন। এই পরিস্থিতিতে এমডি’র অবস্থান ছিল ব্যতিক্রমী—তিনি বিষয়টিকে স্বচ্ছতা ও নিয়মের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন।
সূত্র বলছে, মোশারফ হোসেনের ওপর দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি পত্র সংগ্রহের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। তিনি সম্মত না হওয়ায় পর্ষদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকিও উঠে আসে। শেষ পর্যন্ত, বিবেচনায় পড়ে তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এ নিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।
পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক কমার্স ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছিল।
মোশারফ হোসেন এ বছরের ১৬ জানুয়ারি কমার্স ব্যাংকের এমডি হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান। এর আগে তিনি ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালে, উত্তরা ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে।
এই ঘটনাটি কেবল একজন পেশাদার ব্যাংকারের পদত্যাগই নয়, বরং একটি গভীর প্রশ্ন তোলে—ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের জায়গাগুলো কতটা সুরক্ষিত?

