বাংলাদেশে যেন এক অদৃশ্য অন্ধকার নামছে। মানুষের মনে এখন সবচেয়ে বড় যে ভয়, তা হলো চাঁদাবাজি। যে ভয় শুধু ব্যবসায়ী কিংবা ধনী লোকদের নয়—এই ভয় ছড়িয়ে গেছে সাধারণ মানুষের ঘরেও। রাস্তায় বের হলে আতঙ্ক, দোকান খুললেই হুমকি, চাঁদা না দিলেই হামলার শিকার—এ যেন নতুন স্বাভাবিকতা হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতেও রাত হলেই নেমে আসে এক অদ্ভুত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। গুলশানে সম্প্রতি ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে একদল তরুণ রাতের বেলা চাঁদা তুলতে এসে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর আতঙ্কের পারদ বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। শুধু গুলশান নয়, দেশের নানা জায়গায়—from ময়মনসিংহ থেকে ঝিনাইদহ, নরসিংদী থেকে চট্টগ্রাম—একই ধাঁচের অভিযোগ আসছে।
মানুষ এখন প্রতিবাদ করছে। মোহাম্মদপুরে শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। আশুলিয়া, সাভার, বাঁশখালী, ময়মনসিংহ—সব জায়গায় জনতা বলছে, “আর না”। কিন্তু সেই আওয়াজ কি পৌঁছাচ্ছে প্রভাবশালী মহলে?
খুনের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রায় ৩৮৫৭টি খুনের মামলা হয়েছে দেশে। প্রতি মাসেই ৩০০-এর বেশি মানুষ খুন হচ্ছে কোনো না কোনো কারণে। এই মৃত্যুগুলোর পেছনে কখনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, কখনো পারিবারিক বিরোধ, আবার অনেক সময় শুধু মাত্র চাঁদা না দেওয়াই হয়ে উঠছে প্রাণহানির কারণ।
এই খুনের তালিকাও ভয় জাগানো। মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগকে কুপিয়ে মারা হলো, মিরপুরে এক দম্পতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হলো, বাড্ডায় গুলিতে খুন হলো এক ঠিকাদার, গুদারাঘাটে প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত হলো এক রাজনীতিবিদ। যেন প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি পাড়ায়, কারো না কারো পরিবারে নেমে আসছে শোকের ছায়া।
পুলিশ বলছে, তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। শীর্ষ চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি হচ্ছে, নিচু স্তর পর্যন্ত নাম দেওয়া হচ্ছে, অভিযানও শুরু হতে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই তালিকা কি সত্যিকারের অপরাধীদের নাম বহন করছে, নাকি ছোটখাটো লোকজন দিয়ে শোডাউন চলছে?
দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোও আজ চাঁদাবাজির টার্গেট। ময়মনসিংহের এক ক্লিনিক মালিক জানালেন, “চাঁদা না দিলে হামলা হয়, ভাঙচুর করে। আমরা চিকিৎসা দিতে এসে এখন নিজের জীবন নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকি।”
এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে সামনে আরও অন্ধকার। মানুষ চায় নিরাপত্তা, চায় ন্যায়বিচার, চায় শান্তিতে বাঁচতে। কিন্তু যারা এসব ভয়, সন্ত্রাস আর চাঁদার ভয়াবহতা তৈরি করছে—তাদের পেছনে কারা আছে, সেই প্রশ্ন এখনও ঘুরছে জনমনে। আর কত দেরি হলে এই ভয় দূর হবে?

