বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরবির প্রভাষক মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল সরকারি শিক্ষকতার পাশাপাশি কোটি টাকার মাদ্রাসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষক একই সময়ে অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারেন না। কিন্তু মুস্তফা কামাল নিয়মের তোয়াক্কা না করে ‘আল জামি’আহ আস-সালাফিয়্যাহ’ মাদ্রাসার পরিচালনা করছেন।
মাদ্রাসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে তার স্ত্রীকে, তবে মুস্তফা নিজেও নিয়মিত ক্লাস নেন এবং পুরো প্রতিষ্ঠানের তদারকি করেন। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি কলেজের তুলনায় তিনি মাদ্রাসায় বেশি সময় দেন এবং সরকারি ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না।
মাদ্রাসায় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ, আর্থিক লেনদেন, ভর্তি কার্যক্রম—সবই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে দম্পতির হাতে। প্রতিটি রুমে এসি বসানোসহ বিলাসবহুল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় ব্যতিক্রম। মাদ্রাসার সাইনবোর্ডে লেখা ‘অলাভজনক প্রতিষ্ঠান’, কিন্তু বাস্তবে এটি রমরমা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
মাদ্রাসায় প্রি-প্লে থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের কাছ থেকে মাসিক ফি বাবদ আয় হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এছাড়া বই-খাতা-পেনসিলসহ সব শিক্ষা উপকরণ মাদ্রাসা থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়, যা থেকে অতিরিক্ত আয় করা হচ্ছে। এক অভিভাবক জানান, তার সন্তান একজন শিক্ষার্থীর জন্য মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়, যা ‘অলাভজনক প্রতিষ্ঠান’-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
স্থানীয় শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, মাদ্রাসার কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। দাখিল স্তরের অনুমোদনও নেই, অথচ অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিসার মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরি রেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা আইনবিরোধী এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় উঠে এসেছে সরকারি শিক্ষকদের দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণের সীমা, যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বাণিজ্যিক মনোভাব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

