কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টে নামতেই চোখে পড়ে এক বিশাল অবৈধ নির্মাণকাজ। সৈকতের বামপাশে সরকার ঘোষিত নো-ডেভেলপমেন্ট জোনে টিনের ঘেরা দিয়ে ১৪ তলা হোটেল তৈরি করা হচ্ছে। ঘেরা দেওয়া জায়গার এক পাশে একটি ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে, আর অন্য পাশে পাইলিং চলছে।
স্থানীয়রা ও পর্যটকেরা প্রশ্ন করছেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে এ ধরনের অবৈধ কাজ হচ্ছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, আইন অমান্য করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। তারা জানান, সরকার দ্রুত কাজ বন্ধ না করলে আদালতে যাবে।
নির্মাণকাজে যুক্তরা জানান, এখানে একটি অত্যাধুনিক হোটেল তৈরি করা হচ্ছে। ছুটি নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান এটি করছে। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে বলা হচ্ছে, ‘ছুটি বে’ নামে দেশের প্রথম সাত তারকা হোটেল নির্মাণ হচ্ছে। প্রচার অনুযায়ী, মাত্র দুই লাখ টাকায় হোটেলের মালিকানায় অংশীদার হওয়া যাবে। হোটেলের নানা সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও প্রচারণা চলছে।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, কলাতলী এলাকায় ‘ছুটি বে’ নামে কোনো হোটেল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে এই প্রচারণা প্রতারণার শামিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন জানান, হোটেল নির্মাণের জন্য কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আসলে, যেই জায়গায় হোটেল তৈরি হচ্ছে বলে প্রচার, সেখানে স্যান্ডক্র্যাব নামে একটি রিসোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কাজ করায় সম্প্রতি স্যান্ডক্র্যাবকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
একটি পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) গত ২ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৬ মে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর কক্সবাজার টাউন অ্যান্ড সি-বিচ আপ টু টেকনাফ’ নামে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় সৈকতসংলগ্ন প্রথম ৩০০ মিটার এলাকাকে নো-ডেভেলপমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়। সেখানে কোনো স্থাপনা তৈরি করা যায় না। তবু ১০০ মিটারের মধ্যে হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে এবং সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপনও চলছে।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মজিবুল হক জানান, আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা চলবে না। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আদালতে যাবে তারা।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়েছি, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছুটি কক্সবাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ বলেছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় প্রচারণা চালানো জরুরি। অনুমোদনের বিষয়টি জমির মালিক শাহজাহান মুনির জানেন। শাহজাহান মুনির জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে স্যান্ডক্র্যাব রিসোর্ট নির্মাণের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়েছিলেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন ২০ শর্তে স্যান্ডক্র্যাব রিসোর্ট নির্মাণের অনুমতি দেন। চৌফলদণ্ডী এলাকার চার ভাইয়ের নামে সাড়ে ৬৫ শতক জমিতে ১৪ তলা রিসোর্ট তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু অনুমতি নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে নকশা অনুমোদন বাতিল হয়। ইয়েসের চেয়ারম্যান বলেন, ওই অনুমতি ছিল অবৈধ এবং মেয়াদও শেষ হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নো-ডেভেলপমেন্ট জোনে হোটেল নির্মাণ ও মিথ্যা প্রচারণার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

