ডিজিটালের এই যুগে আমাদের পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়—কিন্তু এই সুবিধাই আজ পরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর এক ফাঁদে। মাত্র একটি স্মার্টফোন দিয়েই এখন অপরাধীরা চালাচ্ছে বৈশ্বিক প্রতারণা, লুটে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব।
ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ইমেইলে পাঠানো “জরুরি লিংক”—এই সহজ কৌশলেই প্রতারকরা আজ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত দখল করে নিচ্ছে। কেউ অসাবধানতাবশত ক্লিক করলেই, তার ব্যাংক তথ্য, পিন, এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটাও চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের হাতে।
শুধু লিংকে ক্লিক নয়, এখন ওটিপি বা এটিএম পিন ছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও করে দিচ্ছে এই চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে তারা কল মার্জিং, ভয়েসমেইল হ্যাক, কিউআর কোড জালিয়াতি, এমনকি স্ক্রিন শেয়ারিং প্রতারণার মতো আধুনিক পদ্ধতিও ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ দুই দফায় হ্যাক হয়ে যাওয়ার পর সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রথমে প্রোফাইল ছবি বদলে তারা হুমকি দেয় “বড় ধরনের সাইবার হামলার”। পেজ পুনরুদ্ধারের ১০ ঘণ্টার মধ্যেই আবার সেটি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। নিজেদের পরিচয় দিতে তারা ব্যবহার করেছিল “গঝ ৪৭ঙঢ” নাম।
ব্যাংকের আইটি টিমের দ্রুত পদক্ষেপে পেজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলেও, ঘটনাটি দেখিয়েছে—দেশের বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন সাইবার ঝুঁকির বাইরে নয়।
আইটি বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ আল ইমরান মনে করেন, “অপরাধীরা যেভাবে নতুন কৌশল আনছে, প্রশাসনের পদক্ষেপ সে হারে এগোচ্ছে না। সরকার চাইলে এই অপরাধ সহজেই রোধ করা সম্ভব।”
বাংলাদেশ ব্যাংকও নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলছে, ব্যক্তিগত তথ্য কোথাও শেয়ার করার আগে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের জন্মতারিখ, ফোন নম্বর বা এনআইডি নম্বর প্রকাশ না করাই নিরাপদ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর নাম ব্যবহার করে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালুর অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এসব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এসবের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও প্রতারণা ঘটছে।
এমনকি আইনও রয়েছে—‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’-এর অধীনে অনুমোদন ছাড়া অনলাইন বিনিয়োগ সংগ্রহ বা ঋণ প্রদান করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকার জরিমানা হতে পারে।
ডিএমপি’র মিডিয়া সেলের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “সাইবার অপরাধীরা এক ধাপ এগিয়ে থাকে, তবে পুলিশের সাইবার ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনো অচেনা লিংকে ক্লিক করা, অজানা নম্বর থেকে আসা কল রিসিভ করা বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাই এখন সবচেয়ে বড় আত্মরক্ষা। ডিজিটাল যুগে নিরাপত্তার চাবিকাঠি একটাই—সচেতনতা।

