আইএফআইসি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তা ইকবাল পারভেজ চৌধুরী চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি ‘ইকবাল ট্রেডার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা এবং এটি পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চট্টগ্রামের চকবাজার শাখায় একটি হিসাবও খোলা হয়, যেখানে প্রায় ৯ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন দেখা গেছে। তথ্যটি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ইকবাল পারভেজ চৌধুরী নিজেই ব্যাংকের বাইরে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে যুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এই ঘটনার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মনসুর মোস্তফা তাকে প্রশংসাপত্র দিয়েছেন।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ব্যাংকের সার্ভিস রুলের ৯ ও ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে ব্যবসা করেছেন। ব্যাংকের নিয়মে স্পষ্টভাবে বলা আছে—কোনো কর্মকর্তা তার অফিসিয়াল দায়িত্ব ব্যতীত নিজের নামে বা অন্যের জন্য কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন না। কিন্তু ইকবাল পারভেজ চৌধুরী ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই এই ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইকবাল পারভেজ চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে ‘মেসার্স ইকবাল ট্রেডার্স’ নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন, মূলত ব্যবসায়িক ঋণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির নামে ইউসিবি ব্যাংকের চকবাজার শাখায় হিসাব খোলা হয়। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে।
বিএফআইইউ তদন্ত শেষে ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মনসুর মোস্তফার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে, ইকবাল পারভেজ চৌধুরী জানান, ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী অ্যাকাউন্টে কিছু লেনদেন ছিল। পরে তিনি বুঝেছেন এটি তার চাকরির নিয়মের পরিপন্থী, তখন সব লেনদেন বন্ধ করে ব্যাংককে ঋণ না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে এমডি সৈয়দ মনসুর মোস্তফা বিএফআইইউকে বলেছেন, “ইকবাল পারভেজ চৌধুরী একজন সৎ ও কর্মনিষ্ঠ কর্মকর্তা। তার ব্যাখ্যা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।” তবে বিএফআইইউ এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি।
পরবর্তীতে ব্যাংকের ডিএমডি ও মুখপাত্র রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বোর্ড থেকে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত এখনও চলমান, এবং ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কাউকে সরাসরি এই কমিটিতে রাখা হয়নি।

