চব্বিশের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ওই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা।
ক্ষমতাগ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যেই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিটি গঠন করে। কমিটিগুলোকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন প্রদানের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ওই সংস্কার কমিটিগুলোর মধ্যে দুর্নীতি দমনে সরকারের করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয় ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। যেহেতু ড. ইফতেখারুজ্জামান কয়েক বছর ধরে দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা সংস্থা ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের’ নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
যে কারণে খুবই আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে তার নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশগুলো খুবই কার্যকর ও সাহসী প্রমাণিত হবে। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে যখন কমিটির সুপারিশমালা সরকারের কাছে প্রদান করা হয়েছিল তখন সুপারিশগুলো সম্পর্কে বেশকিছুটা আশাহত হয়েছিলাম। কারণ আমার মনে হয়েছিল যে কমিটি দুর্নীতি দূর করতে সাহসী সুপারিশ প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছিল। মনে হয়েছিল, কমিটি খুব বেশি সময় দেয়নি সুপারিশমালা প্রণয়ন ও সমস্যার গভীর বিশ্লেষণে যাওয়ার জন্য। তবু সরকার সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নে নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যাবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু প্রতিবেদন প্রদানের ১১ মাস পার করে এসে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে সরকার এ ব্যাপারে ডাহা ফেল মেরেছে।
দুর্নীতি এ দেশের তুলনামূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনে ব্যর্থতার জন্য প্রধানত দায়ী। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে, আর ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে। লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিয়ে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে ১৯৭৫ সালে পালাতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। দুই দশকের ওই চরম-বিধ্বংসী যুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ভিয়েতনাম বাংলাদেশের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো।
১৯৭৫ সালে সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম যখন বিজয়ী দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল তখন ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’—সুকান্তের এ অবিস্মরণীয় কবিতার লাইন আক্ষরিকভাবে প্রযোজ্য ভিয়েতনামের জনগণের ক্ষেত্রে। এ সত্ত্বে¡ও ভিয়েতনাম কখনই কোনো দেশের কাছে মাথা নত করেনি, ভিক্ষার জন্য হাত পাতেনি। এমনকি অনুদান ও ‘সফট লোনের’ আশায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি। অথচ কী নিদারুণ কষ্টকর ছিল ১৯৭৫-পরবর্তী বছরগুলোয় ভিয়েতনামের জনগণের জীবন! ভিয়েতনামের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭৪ সালে ছিল মাত্র ৬৫ ডলার। ১৯৮৬ সালে ‘দোই মোই’ সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের আগে ১৯৮৫ সালে তা ছিল ২৮৫ ডলার। ২০২৫ সালে আইএমএফ এর প্রাক্কলন মোতাবেক ভিয়েতনামের মোট জিডিপি ৪৯০ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের হিসাব মোতাবেক ২০২৫ সালে ভিয়েতনামের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ৪৮০৬ ডলারে পৌঁছে গেছে, যেটাকে ‘মিরাকল’ বলা হচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি ২০২৫ সালে পৌঁছে গেছে ১৭ হাজার ৪৮৪ পিপিপি ডলারে। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের মাত্র ২ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। অথচ ২০২৫ সালের জুনে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ২ হাজার ৮২০ ডলার, আর ২০২৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে এ অনুপাত ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মানে গত তিন বছরে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যার অনুপাত হয়তো ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে যা খুবই উদ্বেগজনক।
প্রাইমারি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে ভিয়েতনাম ২০০০ সালের মধ্যেই তার পুরো জনসংখ্যাকে শতভাগ শিক্ষিত করে তুলেছে এবং জনগণের বিশাল একটি অংশকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সফল করে তুলেছে। ভিয়েতনামের জনগণের শতভাগ ২০২৫ সালে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় সেবা পেয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফলকে কয়েকটি নগরে কেন্দ্রীভূত না করে ভিয়েতনাম গ্রামীণ জনগণের মাঝে উন্নয়নের সব ডাইমেনশনকে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এখন ভিয়েতনামে প্রতি বছর বৈদেশিক বিনিয়োগপ্রবাহ দাঁড়াচ্ছে ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার।
এ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিশীলতার পেছনের চাবিকাঠি হলো ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম, ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, দক্ষ ও পরিশ্রমী। ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। বন্দর, মহাসড়ক ও সুলভ গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম দ্রুত আধুনিকায়নে সফল একটি দেশ। তৈরি পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনাম এখন বাংলাদেশকে হটিয়ে মাঝে মাঝে গণচীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানটি দখল করে নিচ্ছে। ইলেকট্রনিকস পণ্য রফতানিতে এখন সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। চাল রফতানিতে থাইল্যান্ডকে হটিয়ে ভিয়েতনাম ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ব্রাজিলের পর কফি রফতানিতে ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সাড়ে নয় কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামের মোট রফতানি আয় বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল ৪০৫ বিলিয়ন ডলার।
ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক মিরাকলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়ার মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের তুলনামূলক পশ্চাৎপদতা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এখানকার দুর্নীতির অব্যাহত তাণ্ডব। ২০০১-০৫ সাল বাংলাদেশ বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতি-গবেষণা সংস্থা ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’ কর্তৃক প্রণীত ‘করাপশন পার্সেপশন ইনডেক্সে’ পর পর পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হয়েছিল। গত বছরও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ।
অতএব, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার মিশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া সমীচীন ছিল দুর্নীতি-দমন। কিন্তু জনমনে এরই মধ্যেই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে সরকার সাংবিধানিক সংস্কার কিংবা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে যতটা আন্তরিক, তার তুলনায় দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা দেখিয়ে চলেছে। আমরা বুঝতে পারি, দেড় বছরের শাসনকালে অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে খুব বেশি সফলতা দেখাতে পারবে না। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করতে বাধা কোথায়? দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা কঠোর সংগ্রাম শুরু করে এগিয়ে নিয়ে গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে ওই সংগ্রাম চালিয়ে নিতে বাধ্য হবে না?
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে বেধড়ক দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন ও পুঁজি পাচারের সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে ক্ষমতাসীন হওয়ার অব্যবহিত পরই দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের বেলাগাম তৎপরতা শুরু করার জন্য আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের ও তার আত্মীয়-স্বজনদের সরাসরি আদেশ দিয়েছিলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সাড়ে পনেরো বছরের স্বৈরশাসন শেখ হাসিনাকে সুযোগ করে দিয়েছিল বেলাগাম লুটপাট করতে। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের একটি শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে যে ২০০৯-২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুণ্ঠিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠিত হয়েছে ব্যাংক খাত। এরপর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, ভৌত অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ২৩-৪০ শতাংশ পর্যন্ত নাকি লুটপাট হয়েছে। শ্বেতপত্রে মোট ২৮টি দুর্নীতির পদ্ধতির মাধ্যমে লুণ্ঠন প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণে নিয়ে আসা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, ভারত এবং কয়েকটি ‘ট্যাক্স হেভেন’ সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচারের সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। (এর আগে ২০০১-০৬ মেয়াদে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলেও দেশে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছিল)। কমপক্ষে আগামী এক দশক দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে হাসিনার আমলের এ দুর্নীতির কারণে। শেখ হাসিনার শাসনামলে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় ও স্বল্প প্রয়োজনীয় মেগা-প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সারা দেশে বেলাগামভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। মেগাসহ সব প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন-চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লাখ লাখ কোটি টাকা, যেজন্য এসব প্রকল্পের ব্যয় ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার ‘ডাটা ডক্টরিং’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে দেশটাকে লুটেপুটে ছারখার করে দিয়েছে, যে অর্থের সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এ পুঁজি লুণ্ঠনের কেন্দ্রে ছিল হাসিনা পুত্র জয়, রেহানা কন্যা টিউলিপ ও রেহানা পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তার পুত্র শেখ ফাহিম, শেখ হেলাল, তার ভাই শেখ জুয়েল ও তার পুত্র শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ তাপস, শেখ পরশ, লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী এবং হাসিনার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। আর ছিল এস আলম, সালমান এফ রহমান, সামিটের আজিজ খান, বসুন্ধরার আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম ও নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের মতো লুটেরা অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার লুটেরা রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিবাজ আমলা।
তবু বলতে হবে, শুধু শেখ হাসিনার দুর্নীতির ভয়াবহতা বর্ণনা করলে প্রশ্ন উঠবে আপনারা গত দেড় বছরে সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কী কী ‘কংক্রিট পদক্ষেপ’ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন? সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বেশির ভাগ উপদেষ্টা দুর্নীতি করেন না বলে জনমনে বিশ্বাস জন্মেছে, কিন্তু প্রত্যেক উপদেষ্টার নিয়ন্ত্রণাধীন মন্ত্রণালয়গুলোয় দুর্নীতি দমনে কী কী পদক্ষেপ গৃহীত ও বাস্তবায়ন হয়েছে সে ব্যাপারে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি মনে করি। (একজন ছাত্র উপদেষ্টা ও কয়েকজন এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে)! সাধারণ জনগণ তাদের দৈনন্দিন জীবনে এখনো দুর্নীতির প্রকোপে জর্জরিত রয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগ পতনের পর তাদের স্থলাভিষিক্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। ভূমি-সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রকোপ আগের মতোই রয়ে গেছে। কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিতে কোনো আঁচড়ই পড়েনি। বিআরটিএ অফিসে এখনো প্রতি পদক্ষেপেই দুর্নীতির তাণ্ডব। সরকারি যেকোনো অফিসেই সেবা পেতে হলে আগের মতো ঘুস দিতে হচ্ছে। বিচার বিভাগের ঘুস-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আগের মতোই বহাল রয়ে গেছে। ঘুস-দুর্নীতির জন্য কোনো স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি গত ১৫ মাসে যাওয়ার কোনো খবর পত্র-পত্রিকায় পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক কর্তা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা শুরু করলেও কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা শেষ করেছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে না। দেশের সংবিধানে কিছু ত্রুটি থাকার কারণে শেখ হাসিনা স্বৈরশাসন জারি করতে পেরেছিলেন, দুর্নীতি-পুঁজি লুণ্ঠন-পুঁজি পাচার যার প্রধান বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু দেশের ‘এক নম্বর সমস্যা’ দুর্নীতি, তাই দুর্নীতি দমনকে প্রধান অগ্রাধিকার না দেয়াটা বড়সড় ভুল মনে করি।
ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্র: বণিক বার্তা

