যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি কভিড-১৯ মহামারীর পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) ঋণের সুদ প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে যা দেশের বাজেট ঘাটতির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮৩ ট্রিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৮৩ ট্রিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। এই পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে জরুরি সহায়তার ফলে ২০২০ ও ২০২১ অর্থবছরে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ও ২ দশমিক ৭৭ ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতি হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতবার শিক্ষা ঋণ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা বাতিল করেন, যাতে বাজেট ঘাটতি কিছুটা কমাতে সক্ষম হন। তবে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর বাইডেন প্রশাসন সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। বর্তমানে বাজেট ঘাটতির হার ২০২৩ অর্থবছরের ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, বাজেট ঘাটতির এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় নিজেকে অধিক যোগ্য দাবি করলেও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তার দাবির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আস্থা পুনরুদ্ধারে তিনি যে আর্থিক পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন, তা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে অপরদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন ঋণ সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করছে।
হোয়াইট হাউজের বাজেট পরিচালক শালান্দা ইয়াং দাবি করেছেন যে, বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত নীতিমালা অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, অবকাঠামো ও উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা আর্থিক দায়িত্বশীলতার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি এবং অত্যাধিক ধনী ব্যক্তি ও বড় করপোরেশনগুলো থেকে ন্যায্য কর আদায় করছি।”
২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় ৪ দশমিক ৯২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়ে ৪৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হয়েছে। তবে ২০২৪ অর্থবছরের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের ঋণের সুদ ২৯ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাজেট ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ। ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও উচ্চ সুদহারের কারণে সুদের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মেডিকেয়ার স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চেয়েও বেশি। মার্কিন অর্থ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সুদ বাবদ ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৯১ সালের রেকর্ড ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশের নিচে রয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে ফেডের ঋণের গড় ওয়েটেড সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে গেছে। আগস্টে এই সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা ২০২২ সালের জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো কমেছে।
এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় ৭ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ০৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং সামরিক খাতে ৬ শতাংশ বেড়ে ৮২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার তবে সরকার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল রেকর্ড ৫২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা মূলত প্রলম্বিত ব্যয়ের সমন্বয়ের কারণে ২৭ শতাংশ কমেছে।
এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাজেট ঘাটতি দেশের জনগণের সামনে নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে, যা আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।