চিনি আমদানির শুল্ক কমানোর পরও দেশের বাজারে চিনির দাম বেড়েছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৮ ও ১৭ অক্টোবর চিনির ওপর শুল্ক-কর হ্রাস করে, প্রত্যাশা ছিল এর ফলে চিনির দাম কমবে। তবে শুল্ক কমানোর পর বাজারে চিনির সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে এবং দামও ঊর্ধ্বমুখী।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার এবং কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, যা চার-পাঁচ দিন আগেও ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। এনবিআরের শুল্ক-কর কমানোর পর প্রতি কেজিতে ১১ টাকা কমার কথা ছিল কিন্তু বাস্তবে উল্টো দাম বেড়েছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম পাঁচ টাকার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাইকারি বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন যে মিল পর্যায়ে চিনির সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মিজানুর রহমান জানান, তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে ছয় হাজার টাকায় এক বস্তা চিনি কিনে তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৬ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা আরও বেশি দামে চিনি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে দাম বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়া এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি স্থানীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া চিনির ওপর আগে থেকে আরোপিত উচ্চ শুল্কের ফলে দেশের বাজারে চিনি প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক কমানোর পরও বাজারে এর কোনো প্রভাব না পড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১২ দিনে দেশে নতুন করে কোনো চিনি আমদানি হয়নি। শুল্ক হ্রাসকৃত চিনির সরবরাহ না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
সরকার ৮ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। এর পরও বাজারে সংকট এবং দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চোরাচালানকেও দায়ী করা হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চিনি চোরাচালানের কারণে দেশের বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে চিনির বাজারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিনি চোরাচালান দীর্ঘদিন ধরে চলমান যা দেশীয় শিল্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। চোরাচালানের কারণে স্থানীয় পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি কমিয়ে দেয়, ফলে বাজারে চিনির সরবরাহ কমেছে। যদিও নতুন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তবে এ অবস্থা চিনির দাম কমাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সরকারের শুল্ক হ্রাসের পরপরই আমদানি বাড়ার কথা থাকলেও গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ২ লাখ ৩৯ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কম। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার টন। চিনির বাজার এখন কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল, যারা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধন করে সরবরাহ করে।
চিনির বাজারে এই সংকট কবে কাটবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলেনি, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়ার আশা করছেন অনেকেই।