জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ফাঁকি দেওয়া এবং আয়কর রিটার্ন না দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। এসব কর ফাঁকিবাজ ও কর অব্যাহতির সুবিধা নেওয়া ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি, রিটার্ন জমা না দেওয়া টিআইএনধারীদের (নন-ফাইলার) কাছ থেকে কর আদায়ে মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তাদের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।
রবিবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে ‘রাজস্ব খাত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি’ বিষয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই)।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ এবং স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া। বক্তারা রাজস্ব আদায়ে নীতিগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কর আদায়ের পরিমাণের প্রায় সমপরিমাণ অর্থ প্রতিবছর কর অব্যাহতির কারণে হারাতে হচ্ছে। এটি দীর্ঘদিন ধরেই চলমান সমস্যা। সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় অতিরিক্ত কর ছাড় দিয়ে রাজস্ব ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এনবিআরের কর আহরণের ৯২ শতাংশই টিডিএসসহ স্বয়ংক্রিয় উৎস থেকে আসে। বাকি ৮ শতাংশ সংগ্রহ করেন কর কর্মকর্তারা। এই প্রেক্ষাপটে যারা রিটার্ন জমা দেন না তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের লক্ষ্যে কমিশনারদের নির্দিষ্ট টার্গেট দেওয়া হবে। এতে কর কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং নন-ফাইলার ও কর ছাড় পাওয়া করদাতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা যাবে।
এনবিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি কর শনাক্তরণ নম্বর (টিআইএন) নিলেও নিয়মিত রিটার্ন জমা দেন না। ফলে সীমিতসংখ্যক নিয়মিত করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই বৈষম্য দূর করে সকলকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, অনেক সময় কর ছাড়ের ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তবে নতুন কর অব্যাহতি নীতিতে সংসদের অনুমোদন ছাড়া ছাড় দেওয়া যাবে না। আসন্ন বাজেটে কর অব্যাহতি সীমিত করে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ সহজ করার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর দিকেও নজর থাকবে।
রাজস্ব ঘাটতি কমাতে ও টেকসই রাজস্ব কাঠামো গড়তে এনবিআর আগামীতেও নীতিগত ও প্রশাসনিক সংস্কারে অগ্রাধিকার দেবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান।