৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, বর্তমান কর হার ‘অন্যায়’ এবং ব্যবসার উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত এক সমীক্ষা এ চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে সিপিডি এই তথ্য প্রকাশ করে। করপোরেট কর ও ভ্যাট সংস্কার শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র গবেষক মো. তামিম আহমেদ। সেমিনারের সঞ্চালনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৭২ শতাংশ জানিয়েছেন, কর প্রশাসনে দুর্নীতি তাদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল কর জমা দেওয়ার সুবিধার অভাবও ব্যবসায়ীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী নিয়মিত কর দাবিকে কেন্দ্র করে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, যথাযথ ব্যাখ্যা বা পূর্বাভাস ছাড়া কর কর্মকর্তারা অনেক সময় ইচ্ছেমতো কর আরোপ করেন। তাদের মতে, এই অনুশীলন কেবল করের পরিমাণে প্রভাব ফেলে না, বরং অদৃশ্য চাপ সৃষ্টি করে যা ব্যবসার জন্য আরো ক্ষতিকর।
ভ্যাট সংক্রান্ত আলাদা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বহুমাত্রিক ভ্যাট হারের জটিলতাকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ৭৩.৫ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জটিল ভ্যাট আইন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া অস্পষ্ট ভ্যাট নীতি, কর কর্মকর্তাদের সীমিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার ঘাটতি, পণ্যের শ্রেণিবিন্যাসের জটিলতা এবং উচ্চ অনুবর্তন ব্যয়ও বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এন্টারপ্রাইজ সার্ভের কাঠামো অনুসরণ করে পরিচালিত এ সমীক্ষায় ঢাকা ও আশপাশের ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
সেমিনারে সাবেক অর্থ সচিব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রবন্ধে ৬১টি সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যক্তির অনলাইন রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর্পোরেট ক্ষেত্রেও দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা খাত আলাদাভাবে করের ভাবনায় নেওয়া যেতে পারে। সুপারিশে বলা হয়েছে, করপোরেট ট্যাক্স কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে রপ্তানিমুখী ও অরপ্তানি উভয় খাতের জন্য আইনগত করহার ১৫ শতাংশের নিচে না হয়। এটি বাস্তবায়নযোগ্য বলে তিনি মনে করেন।
আলোচনায় ট্যাক্স বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ মাহবুব সালেকিন বলেন, কর অফিসে দুর্নীতি কিছুটা বেশি। মামলাগুলো দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে সমাধান হলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পেত। তখন বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরতা কমতো। এনবিআর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।
অন্যদিকে ভ্যাট বিভাগের প্রথম সচিব মশিউর রহমান বলেন, আগামী ১০ বছরের রাজস্ব কৌশলপত্র ঘোষণা করা হয়েছে। ভ্যাটের ওপর ফোকাস বাড়ালে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। তখন ভ্যাট রেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কমে আসবে। এই মুহূর্তে ভ্যাট রেট কমালে রাজস্ব আহরণে বড় প্রভাব পড়বে।