নরওয়ের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল, নরওয়ে অয়েল ফান্ড, ইসরায়েলি কার্যক্রমের কারণে নির্মাণ সরঞ্জাম কোম্পানি ক্যাটারপিলারের শেয়ার বিক্রি করেছে। এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা নরওয়ের এ পদক্ষেপে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ এবং সরাসরি নরওয়েজিয়ান সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির সার্বভৌম তহবিলে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
গত সপ্তাহে নরওয়ের তহবিল বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হিসেবে ক্যাটারপিলারের শেয়ার বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানির নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা অভিযোগ তুলে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তি ধ্বংসে ক্যাটারপিলারের বুলডোজারের ব্যবহার বিস্তৃত ও পদ্ধতিগতভাবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে।
নরওয়ের এই পদক্ষেপ দেশটির ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, “নরওয়ের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের এ সিদ্ধান্তে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। মনে হচ্ছে এটি ক্যাটারপিলার ও ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ দাবির ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরাসরি নরওয়েজিয়ান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম নরওয়ের ওপর শুল্ক আরোপ ও তহবিলের কর্মকর্তাদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “নরওয়ের তহবিল যারা চালান, তারা জেনে রাখুন, ইসরায়েল তাদের পণ্য ব্যবহার করে। তাই ক্যাটারপিলারের সঙ্গে ব্যবসা না করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করা বা ভ্রমণ করা কোনো অধিকার নয়, এটি বিশেষ সুবিধা।”
ক্যাটারপিলারের শেয়ার বিক্রি নরওয়ের তহবিলের জন্য প্রথম ঘটনা, যেখানে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কারণে কোনো অ-ইসরায়েলি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেছে। এটি এমন সময় ঘটল, যখন ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। নরওয়ের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের আইন ব্যবহার করে নরওয়েজিয়ান তহবিল বা সরকারকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
গত বছর নরওয়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নরওয়ের জনগণের চাপের কারণে দেশটি ইসরায়েলের অন্যতম বড় ইউরোপীয় সমালোচক হিসেবে পরিচিত। বিষয়টি আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নরওয়েজিয়ান সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারেও প্রভাব ফেলেছে।
ছোট রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করেছে, তহবিলকে ইসরায়েল থেকে সম্পূর্ণ সরে আসা উচিত এবং প্রধান নির্বাহী নিকোলাই ট্যাঙ্গেনকে পদত্যাগ করতে হবে। তবে ট্যাঙ্গেন এসব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি প্রায় অর্ধেক ইসরায়েলি বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্যাটারপিলারের শেয়ারও বিক্রি করেছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক চাপের কারণে নরওয়ে যদি স্বাধীনতা হারায়, তবে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতাও কমে যাবে।