দেশের পুঁজিবাজার আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে। মূল্যসূচক বাড়ছে, লেনদেনের গতি কিছুটা চাঙা। তবু বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা একের পর এক বাজার ছাড়ছেন। আগস্ট মাসে তাঁদের নামভিত্তিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৭৮১টি। গত ২৩ মাসে বিদেশি বিও হিসাব প্রায় ১২ হাজার কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধারা কোনো একক কারণে হয়নি। টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকটের কারণে লভ্যাংশ বিলম্ব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বাজারে লাভের অভাব এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত ভুয়া বিও বন্ধ হওয়া—সব মিলিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
বিও হিসাব হলো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে খোলা বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। বর্তমানে এটি দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭২-এ। অর্থাৎ ২৩ মাসে কমেছে ১১ হাজার ৭৪০টি। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি ও প্রবাসীর সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। মূলত ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তাঁরা বাজার ছাড়তে শুরু করেন, যা ২০২৪ সালের ২০ মে পর্যন্ত চলেছে। এই সময়ের মধ্যে বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজার ১৭৬টি। ২০ মে থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত সাময়িক উল্টো প্রবণতা দেখা দেয়। এই সময়ে বিদেশি ও প্রবাসীর বিও হিসাব বেড়ে ৭৪টি হয়। তবে এরপর থেকে আবার সংখ্যা কমতে শুরু করে, যা আগস্টেও অব্যাহত ছিল।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “মুদ্রার বিনিময় হার অস্থিতিশীল হওয়ায় টাকার মূল্যমান কমায় বিনিয়োগকারীর লোকসান বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। ডলার সংকটের কারণে লভ্যাংশ সময়মতো পৌঁছায় না। অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবেশে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে রাজি হন না। মূলত এ তিন কারণেই বিদেশি ও প্রবাসীরা বাজার ছাড়ছেন।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান যোগ করেন, “প্রবাসীরা মূলত লাভের আশায় বাজারে আসেন। শেয়ারবাজারে লভ্যাংশ বা লাভ না হলে তাঁরা চলে যান। এছাড়া অনেক ভুয়া বিও বন্ধ হওয়ার কারণে সংখ্যা কমেছে।”
পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আল-আমিন মনে করেন, “বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও কমায় আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা এনআরবি বা বিদেশি কোটা দেখিয়ে দেশের ভেতর থেকে বিও করেছিলেন, সেগুলো বন্ধ হওয়ায় সংখ্যা কমেছে। আগে অনিয়ম ছিল, এখন শৃঙ্খলায় ফেরায় তার প্রভাব পড়েছে।” ২০২৪ সালের শুরুতে দেশের পুঁজিবাজারে সব বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। বর্তমানে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ২১১-এ। অর্থাৎ এই বছরে কমেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৪০টি।