পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধ-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) তার শেয়ার সাবস্ক্রিপশন বাবদ পদ্মা ব্যাংকে আটকে থাকা ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাচ্ছে।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। অর্থসংকটে থাকা এনটিসি ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহ করছে। বিনিয়োগকারীরা প্রথম ধাপে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেন। পরবর্তীতে পদ্মা ব্যাংক পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তবে অবশিষ্ট ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপের সাবস্ক্রিপশন শেষ হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর ন্যাশনাল টি কোম্পানি নতুন শেয়ার ইস্যু করলেও, ব্যাংকে আটকে থাকা টাকা এখনও হাতে পাননি। বিএসইসি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আনা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। এর আগে কোম্পানি নানা আলোচনা ও আশ্বাসের পরও টাকা না পাওয়ায় বিএসইসির সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল।
পদ্মা ব্যাংকের সিইও কাজী মো. তালহা বলেন, “ব্যাংকে বর্তমানে তারল্য সংকট রয়েছে। শেয়ার সাবস্ক্রিপশনের কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে, বাকিটা ধাপে ধাপে দেওয়ার কথা ছিল। চেষ্টা করছি কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহায়তা না পাওয়া সমস্যার সমাধান হয়নি।” শেয়ার সাবস্ক্রিপশনের টাকা কোথায় খরচ হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “টাকা ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে খরচ হয়েছে। তারল্য সংকট থাকায় শাখাগুলো ব্যবহার করেছে।” পদ্মা ব্যাংক এখন গুরুতর তারল্য সংকটে ভুগছে। নতুন আমানত আসছে না, পুরনো গ্রাহকের আমানত ফেরত দেওয়াও ব্যর্থ হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “সব নজর এখন ঋণ উদ্ধারে। ব্যাংক যেখানে টাকা পায়, সেটিই শাখা ও গ্রাহকের খরচে ব্যবহার হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহককে ছোটখাটো অর্থই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের আলোচনা শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন আমানত আসা বন্ধ হয়ে গেছে। মার্জারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর গ্রাহকরা একযোগে কোটি কোটি টাকা তোলায় ব্যাংক বিপর্যস্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও কোনো সহায়তা আসেনি। ফলে বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
পদ্মা ব্যাংকের স্থূল খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯০.৫৫ শতাংশ। ব্যাংকের মোট ঋণ বিতরণ ৫ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এসএমই খাতের ঋণ ২ হাজার ২৬ কোটি এবং ট্রেড সার্ভিস খাতের ঋণ ১ হাজার ৮৫৯ কোটি। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একই সময়ে ব্যাংকের সমন্বিত লোকসান ৫ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা।
পদ্মা ব্যাংকে প্রায় ৪৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ৮৯৯ কোটি, বাকি আইসিবি, সাধারণ ও জীবন বীমা করপোরেশন, তিতাস গ্যাস ও বিদ্যুৎ বোর্ডের আমানত। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারকের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পদ্মা ব্যাংককে বিস্তারিত রোডম্যাপ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।