Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sun, Sep 14, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • খেলা
    • প্রযুক্তি
    • বিনোদন
    • মতামত
    • সাহিত্য
    • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ডলার সংগ্রহ বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই কৌশল
    অর্থনীতি

    রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ডলার সংগ্রহ বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই কৌশল

    কাজি হেলালSeptember 14, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা বাড়ানোর জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমানে (১৩ সেপ্টেম্বর-২০২৫) গ্রস হিসাবে দেশের রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকলেও ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

    এই অবস্থায় রিজার্ভ টেকসই রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে। প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনা, উন্নত এক্সচেঞ্জ রেট এবং ডিজিটাল চ্যানেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আনার চেষ্টা চলছে, যাতে রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

    ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে আরও ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৩ই জুলাই প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত প্রায় দুই মাসে ১১ দফায় ১১২ কোটি ৯৫ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিলামে ডলার কেনার ফলে রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

    এর আগে ১০ ধাপে বিভিন্ন দামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ৯৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৩ই জুলাই প্রথম দফায় ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৫ই জুলাই ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে তারা কেনে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২৩শে জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ কোটি ডলার কেনে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। ৭ই আগস্ট কেনা হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রতি ডলারের দাম পড়ে ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। ১০ই আগস্ট পঞ্চম দফায় ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা দরে কেনা হয় ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ১৫ই আগস্ট কেনা হয় ১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২৯শে আগস্ট কেনা হয় ১৫ কোটি ডলার।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর শুরুতে মোট গ্রস রিজার্ভ প্রায় ৩০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা চলতি মাসের মধ্যেই কিছুটা কমে আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) ৩০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার-এ দাঁড়িয়েছে। তবে রিজার্ভ নিয়ে দু’টি ভিন্ন হিসাব দেখা যায়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী মোট রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবহারযোগ্য বা কার্যকর রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

    এই পার্থক্য মূলতঃ হিসাবের পদ্ধতি ও অন্তর্ভুক্ত সম্পদের ধরন ভিন্ন হওয়ার কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট মুদ্রা, স্বর্ণ ও অন্যান্য বৈদেশিক সম্পদকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে আইএমএফের হিসাব শুধুমাত্র বাজারে সরাসরি ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভকে গুরুত্ব দেয়। অর্থাৎ মোট রিজার্ভ যতই বড় দেখাক, প্রকৃতপক্ষে বাজারে সহজলভ্য রিজার্ভ কম, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং আমদানি ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমানে বাজারে ডলারের চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি রয়েছে। ডলারের দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে কমে না যায়, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখছে। ডলারের দর কমে গেলে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তিনি আরও জানান, ডলার কেনার মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে, রিজার্ভ ক্ষয় কমেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও বেড়েছে।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিন শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। গত দুই মাসে ১৫০ কোটি ডলারের বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গত রোববার গ্রস রিজার্ভ কমে ৩০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ রয়েছে ২৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।

    সংক্ষেপে বলা যায়, মোট রিজার্ভের দিক দিয়ে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো দেখালেও, প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কম হওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই তথ্য দেশের নীতি নির্ধারক এবং অর্থনীতিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।

    ডলারের আঘাত ও রিজার্ভের ওপর প্রভাব: ডলারের মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য এবং বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা এই চাপকে আরও জটিল করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর খাদ্য ও জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে দেশের আমদানি বিল বেড়েছে এবং রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ হচ্ছে। এতে একদিকে রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে টাকার মান কমে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে।

    এই পরিস্থিতিতে জরুরি পণ্য আমদানি ও বহির্বিশ্বের ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে পড়ছে। রিজার্ভের পরিমাণ কমে গেলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দুর্বল হয় এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়ে। বিনিয়োগ ও শিল্প উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ ডলারের সংকটে শিল্পপতিরা কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যার মুখে পড়ে। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।

    বাংলাদেশ ব্যাংক এই সংকট মোকাবিলায় কঠোর মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমদানি সীমিতকরণ এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।

    সংক্ষেপে বলা যায়, ডলারের আঘাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে জটিল চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। রিজার্ভ ধরে রাখতে হলে শুধু নীতিগত পদক্ষেপ নয়, বরং আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের মতো সমন্বিত কৌশল দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশলসমূহ: বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিক কৌশল গ্রহণ করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করে টাকার মান ধরে রাখা ও ডলারের বাজারে অস্থিরতা কমানো হচ্ছে। একই সঙ্গে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বাজার থেকে ডলার কেনা, রেমিট্যান্স প্রবাহে উৎসাহিত করা এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

    ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুশাসন জোরদার করছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (RBS- Risk Based Supervision ) নীতি চালু হবে, যা ব্যাংক খাতকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আরও কাছাকাছি নিয়ে যাবে। এই নীতি ব্যাংকের কার্যক্রমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

    এছাড়া ব্যাংকিং খাতকে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা, ব্যাংকের মুনাফা নিশ্চিত করা এবং তারল্য ধরে রাখার মতো মৌলিক নীতিগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা চলছে।

    সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব কৌশল দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি অর্থনীতির ওপর আস্থা বাড়াতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে টেকসই ভিত্তিতে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।

    রিজার্ভ বাড়াতে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা: বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার ক্রয় করছে। মূলতঃ প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ের বৃদ্ধির কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেলে, আবার ডলারের দর অতিরিক্ত কমে যাওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ডলার কেনার প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যেখানে ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট দামে ডলার বিক্রি করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই দামে কিনে নেয়। কেনা ডলার সরাসরি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়, যা রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এই ডলার ক্রয় কার্যক্রম কোনো তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবিলার জন্য নয়, বরং এটি বাজারে স্থিতিশীলতা আনা, বিনিময় হারের অতিমাত্রায় ওঠানামা রোধ করা এবং রিজার্ভকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী করার একটি কৌশল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদিও স্বল্পমেয়াদে নিলামের মাধ্যমে রিজার্ভ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে রিজার্ভের স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় ও আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ওপর।

    বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, শেষ তিন অর্থবছরে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে মাত্র প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। বর্তমানে প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় এবং আন্তর্জাতিক ঋণ প্রাপ্তির কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়লেও, ডলারের দর অতিমাত্রায় কমতে দেওয়া হয় না। এই ক্রয় কার্যক্রম রিজার্ভ বাড়াতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

    ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা বাড়ানোর জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমানে (সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্রস হিসাবে দেশের রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকলেও ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ তুলনামূলক কম। এই অবস্থায় রিজার্ভ টেকসই রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে। প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনা, উন্নত এক্সচেঞ্জ রেট এবং ডিজিটাল চ্যানেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আনার চেষ্টা চলছে, যাতে রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

    রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার। অনাদায়ী ঋণ (এনপিএল) হ্রাস, তারল্য ও মূলধনের ঘাটতি পূরণ এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রক অদক্ষতা কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করতে না পারলে রিজার্ভের চাপ বাড়তে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

    তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সর্বাগ্রে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যা বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাংকিং খাতের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা যেমন: খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মূলধন ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রণের সীমাবদ্ধতা। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, জ্বালানি তেলের দামের উত্থান-পতন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও রিজার্ভের জন্য বড় হুমকি। তাছাড়া অর্থ পাচার ও অবৈধ লেনদেন নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, কঠোর এলসি যাচাই-বাছাই, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক ঋণের সঠিক ব্যবহার এই পদক্ষেপগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে রিজার্ভ কেবল বাড়বেই না, দেশের অর্থনীতিও আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে পরিকল্পনাগুলো কার্যকর হবে না, বরং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠতে পারে।

    বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা এবং টাকার অবমূল্যায়ন, সব মিলিয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি, বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি নীতির মাধ্যমে এই চাপ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। তবে শুধু নীতিগত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, প্রবাসী আয়ের স্থিতিশীল ধারা বজায় রাখা এবং উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

    অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করতে হলে রিজার্ভকে কেবল সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ না রেখে তার ব্যবহারযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে। স্বল্পমেয়াদে কঠোর নীতি কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আস্থাশীল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাই রিজার্ভ রক্ষার সবচেয়ে বড় শক্তি হবে। অর্থাৎ রিজার্ভকে সুরক্ষিত রাখতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত কৌশল, যেখানে নীতি, সুশাসন, উৎপাদনশীলতা এবং আস্থা, এই সবগুলো একসঙ্গে কাজ করবে।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    দেশে প্রাণিখাদ্যের বাজার ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

    September 14, 2025
    অর্থনীতি

    রাশিয়ার তেল ঘিরে চীন-ভারতের ওপর জি৭-ইইউর শুল্ক হুমকি

    September 14, 2025
    অর্থনীতি

    এলডিসি উত্তরণ: সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নতুন সরকারের হাতে

    September 14, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025

    টেকসই বিনিয়োগে শীর্ষে থাকতে চায় পূবালী ব্যাংক

    অর্থনীতি August 15, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.