জুলাইয়ের মতো আগস্টেও ব্যাংক খাতে কলমানি বাজারে লাখো কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। চলমান তারল্য সংকটই মূলত এই বিপুল লেনদেনের কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে কলমানি বাজারে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। জুলাইয়ে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৭২৭ কোটি টাকা বা প্রায় পৌনে ১ শতাংশ। তবে পরিমাণ এখনো লাখো কোটি টাকার ওপরে রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসের মধ্যে চার মাসে—জানুয়ারি, মে, জুলাই ও আগস্টে—লাখো কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কলমানিতে।
কলমানি হলো ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি টাকা ধার দেওয়ার ব্যবস্থা। যেসব ব্যাংকের নগদ সংকট থাকে তারা প্রয়োজন মেটাতে অতিরিক্ত তারল্য থাকা ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে। এর জন্য সুদ দিতে হয়। চাহিদা-জোগানের ওপর নির্ভর করে সুদহার ওঠানামা করে। প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত তা প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগস্টে মোট লেনদেনের প্রায় ৮৮ শতাংশই হয়েছে ওভার নাইট বা এক দিনের জন্য। এক দিনের ধারে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৪ মাসের মধ্যে এই প্রথম ওভার নাইট ধার লাখো কোটি ছাড়াল। জুলাইয়ে এক দিনের ধার ছিল প্রায় ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তবে আগস্টে সুদের হার কিছুটা কমেছে। জুলাইয়ে গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ, আগস্টে তা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশে। অন্যদিকে, শর্টনোটিশ (২ থেকে ১৪ দিন) মেয়াদে আগস্টে ধার হয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। ১৫ দিন থেকে এক বছরের মেয়াদী ধারের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। এই দুই শ্রেণির লেনদেনও জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কমেছে।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে ১৪ থেকে ১৫টি ব্যাংক মারাত্মক তারল্য সংকটে রয়েছে। অনেক ব্যাংক আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। তবে কার্যক্রম চালু রাখতে প্রতিদিন অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে হচ্ছে। এদিকে ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি আমানতকারীদের আস্থা বাড়ছে, ফলে সেখানে আমানত প্রবৃদ্ধি হলেও মাঝারি মানের ব্যাংকগুলোতে আমানত তেমন বাড়ছে না। এজন্য তারাও কলমানি বাজারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ব্যাংক খাত নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন জানান, ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৮ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা মন্দ ঋণ এবং ৭ লাখ কোটি টাকা সমস্যাপূর্ণ অবস্থায় আছে। তিনি আরও বলেন, দেশের ১৫টি ব্যাংক লুটপাটের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি সরাসরি এবং বাকি ৬ থেকে ৭টি পরোক্ষভাবে লুট হয়েছে।
একই আলোচনায় পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এতে অনেক আমানতকারী চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছেন না, যা ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।