জলাবদ্ধতা এখন শুধু রাজধানী বা বড় শহরের সমস্যা নয়। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতেও এ সমস্যা দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। স্থানীয় খালগুলো একের পর এক দখল ও দূষণের শিকার হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে একসময় শতবর্ষী একটি খাল প্রবাহিত হতো। শহরের পানিনিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ছিল এই খাল। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ফলে শহর জলাবদ্ধতা থেকে অনেকটা রক্ষা পেত কিন্তু এখন সেই খাল প্রায় হারিয়ে গেছে। প্রভাবশালী মহলের ব্যক্তিগত স্বার্থে খালের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। খালের পানি দূষিত হচ্ছে। একসময় যে খাল শহরকে বাঁচাত, এখন তার অস্তিত্বই সংকটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করছে না। সময়মতো উদ্যোগ না নেওয়ায় খাল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ফলে শহরের মানুষকে এখন জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাল রক্ষা না করলে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও প্রকট হবে। পাশাপাশি শহরের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মকভাবে বাড়বে।
মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত শতবর্ষী একটি খাল ভরাট করে নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খালটি একটি অংশ অস্তিত্ব হারিয়েছে। অবশিষ্ট অংশও দখল হওয়ার পথে। অভিযোগ উঠেছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান খালের একটি অংশ দখল করে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সে বাড়ি রক্ষা করতেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ খালটি ভরাট করে নালা নির্মাণ করে। ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪০ টাকা ব্যয়ে খালটির ওপর ১৫০ মিটার আরসিসি নালা নির্মাণ করা শুরু হয়। সরকারি টাকা ব্যবহার করে ব্যক্তিবিশেষের সুবিধার জন্য পরিবেশের এমন ক্ষতি করা এক চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
খালটি দিয়ে একসময় বড় বড় নৌকা চলত। খালের পানি গোসল, রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালির সব ধরনের কাজে ব্যবহৃত হতো। খালটি দিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর ও কলেজপাড়া এলাকার বন্যা-বৃষ্টির পানি নামত। দুই বছর আগেও বর্ষায় কাদাযুক্ত ঘোলা জোয়ারে পানি ঢুকত খালটিতে। তবে খালের উৎসমুখসহ বিভিন্ন স্থান দখলে খালটি এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। যে যার মতো ভরাট ও দখল করেছে। খালটি ভরাট ও দখল হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রধান সড়কগুলোতে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। সুপারমার্কেট, বাজার, হাসপাতাল, থানা সড়কসহ সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।
সহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য, এ প্রকল্পের কাজ বিগত সরকারের আমলে সবার সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছিল এবং তাঁর কাজ শুধু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। কিন্তু দেখা গেল, বিগত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে গেছেন তাঁরা। প্রকল্পটি বাতিল করার কোনো সদিচ্ছাও প্রকাশ পায়নি।
মুন্সিগঞ্জের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শহরের শতবর্ষী খাল এভাবে হারিয়ে যাবে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা আশা করব, নালাসহ সব অবৈধ ও পরিবেশবিরোধী স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি পুনরুদ্ধার করা হবে। শহরের পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা সচল করা হবে। সূত্র: প্রথম আলো