বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার এখনও সীমিত হলেও দ্রুত বাড়ছে। এই প্রবৃদ্ধিকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরেছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মশিউর আরেফিন মনে করেন, নীতি পরিবর্তন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৌশলগত উদ্ভাবন দেশকে দিচ্ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ভোক্তা ক্ষমতায়নের নতুন যুগের সূচনা।
সম্প্রতি আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) বাধ্যতামূলক শর্ত প্রত্যাহারের পর থেকে ক্রেডিট কার্ড খাতে প্রবৃদ্ধি দৃশ্যমান হয়েছে। জুলাইয়ের পর থেকে সিটি ব্যাংকে মাসিক নতুন কার্ড ইস্যু বেড়েছে ২১ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাংকগুলোও একই ধারা লক্ষ্য করছে। মশিউর আরেফিন আশা করছেন, এ প্রবৃদ্ধি আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
তার মতে, ক্রেডিট কার্ড কেবল লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং জীবনধারা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপকরণ। কিস্তি সুবিধা বা ইএমআই ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ সহজেই পণ্য ও সেবা কিনতে পারছে। এটি নগদ অর্থ নির্ভরতা কমিয়ে দিচ্ছে, ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার ঘটাচ্ছে এবং পুরস্কারভিত্তিক ভোগ সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করছে।
তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার এখনও খুবই কম। বর্তমানে কেবল ১.৫ শতাংশ মানুষ এ সেবার আওতায় আছে। ৭ কোটি ৫০ লাখ কর্মশক্তির দেশে অন্তত এক কোটি ব্যবহারকারী হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সিটি ব্যাংক এখন মধ্য ও নিম্নআয়ের গ্রাহকদের দিকে নজর দিচ্ছে। পিএসআর শর্ত তুলে নেওয়ার ফলে এ সুযোগ আরও বেড়েছে। তবে ব্যাংকটি বলছে, গ্রাহক বাছাই ও ঋণ যাচাই প্রক্রিয়া শক্ত করে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হচ্ছে, যাতে অতি-ঋণগ্রস্ততা না ঘটে।
লেনদেনে নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সিটি ব্যাংক। এজন্য উন্নত প্রতারণা শনাক্ত ব্যবস্থা, শক্তিশালী লেনদেন নজরদারি ও টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করা হয়েছে। এতে গ্রাহকরা ডিজিটাল ও অনলাইন কেনাকাটায় আরও আস্থা পাচ্ছেন। কার্ড বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। শুধু ক্যাশব্যাক বা রিওয়ার্ড দিয়ে আলাদা হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সিটি ব্যাংক কৌশলগতভাবে দেশি-বিদেশি রিটেইলার, এয়ারলাইন্স ও সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করছে।
এর মাধ্যমে গ্রাহকরা পাচ্ছেন ভ্রমণ সুবিধা, ডাইনিং অফার থেকে শুরু করে জীবনধারাভিত্তিক বিশেষ সুযোগ। ফলে একটি ক্রেডিট কার্ড কেবল পেমেন্ট টুল নয়, বরং সমৃদ্ধ জীবনধারার দরজা খুলে দিচ্ছে। নীতি পরিবর্তন ইতিমধ্যেই প্রবৃদ্ধি এনেছে। তবে আরও সুযোগ আছে। মশিউর আরেফিন মনে করেন, ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো ও ব্যক্তিগত ভ্রমণ কোটার সীমা বাড়ালে বাজার আরও গতিশীল হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনাও চলছে।
অন্যদিকে, ডিজিটাল ওয়ালেট ও “বাই নাও, পে লেটার” মডেল নতুন করে ক্রেডিট অ্যাক্সেস তৈরি করছে। বিশেষ করে তরুণ ও নিম্নআয়ের ভোক্তারা এ সুযোগ পাচ্ছেন। বিকাশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে সিটি ব্যাংক ইতিমধ্যে এই সেবা চালু করেছে। এতে মানুষ সহজে স্বপ্নের পণ্য কিনতে পারছে। ব্যাংকের মতে, এসব উদ্ভাবন ক্রেডিট কার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং পরিপূরক। এগুলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াচ্ছে, ভোগ বাড়াচ্ছে এবং ব্যাংকগুলোকে আরও গ্রাহককেন্দ্রিক হতে উৎসাহিত করছে।
মশিউর আরেফিন বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এগুলো শুধু লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং জীবনধারা বদলে দেবে, আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে।

