বর্তমানে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের বাজারের আকার প্রায় ৪.৮ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এটি প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
শুধু দেশীয় বাজার নয়, রপ্তানিতেও বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে খাতে এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। দেশের মোট খাদ্যপণ্য রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ বিশ্বে মাত্র পাঁচটি দেশে যায়, আর পাঁচ ধরনের খাবার মিলিয়ে মোট রপ্তানির অর্ধেক অংশ জুড়ে রয়েছে। অর্থাৎ নতুন বাজার তৈরি এবং পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে।
এই তথ্য তুলে ধরেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত খাত প্রাথমিক কৃষি ও উৎপাদনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর মতো কাজ করছে। এটি জিডিপি, রপ্তানি বৈচিত্র্য ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ড. মোয়াজ্জেম আরও জানান, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে নতুন গন্তব্য ও বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে। অধিকাংশ পণ্যের মূল ক্রেতা এখনও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আমাদের পণ্য এখনো বিশ্বের উন্নত দেশের খাদ্য মান মেনে তৈরি করা হচ্ছে না।
একই কর্মশালায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ গ্রুপ স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ১৪৮টি দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে। তবে ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে অনেক পণ্য অনিরাপদ হচ্ছে, যা প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় সমস্যার সৃষ্টি করছে। দেশে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (GAP) অনুপস্থিত থাকায় ক্ষতিকর পদার্থ আলাদা করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যপণ্যের সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়েছে। অনেক পণ্য নষ্ট হচ্ছে বা অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের মান পরীক্ষার জন্য উন্নত ল্যাব নেই, যা আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে বাধা সৃষ্টি করছে।
কামরুজ্জামান কামাল উল্লেখ করেন, রেগুলেটরি ও পলিসি ঝুঁকিও রয়েছে। একটি খাদ্য ব্যবসা শুরু করতে প্রায় ৪২টি অনুমতি প্রয়োজন, পাশাপাশি নবায়ন ফি ও লাইসেন্স ফি অনেক বেশি। এছাড়া ট্যারিফ ব্যারিয়ার, শিপিং খরচ, ওয়ারহাউজ সুবিধার অভাব এবং দূর্বল ব্র্যান্ডিং দেশের খাদ্য পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পিছিয়ে রাখছে।
তবে ইতিবাচক দিকও আছে। দেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের গুণমান আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে, এবং গণমাধ্যমে এর ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রচারণা দেশের ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে পারে।
কর্মশালায় ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমদ বলেন, গণমাধ্যম শুধু খবর দেয় না; সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি ও নীতি নির্ধারণেও ভূমিকা রাখে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের সাফল্য, কৃষকের গল্প ও উদ্ভাবন তুলে ধরা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
কর্মশালায় দেশে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাত নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও অংশগ্রহণ করেছেন।

