জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের এক বছর অতিক্রম করেছে, তবে সেই সময়ে ও পরবর্তী অস্থিরতায় বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক শিল্প কারখানা এখনও উৎপাদনে ফিরতে পারেনি। অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হচ্ছে। ফলে প্রায় ১০,০০০ শ্রমিক এখনো বেকার।
বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে বড় বড় শিল্প গোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেশি, যেমন—বেক্সিমকো গ্রুপ, গাজী গ্রুপ এবং বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, “গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর প্রায় দুই লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ৫০,০০০ জন নতুন কাজে যোগ দিতে পেরেছেন, কারণ এখনও অনেক কারখানা বন্ধ।”
গাজীপুরের কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের উদাহরণ তিনি তুলে ধরেন। একসময় এখানে ৩৫,০০০ শ্রমিক কাজ করতেন, এখন কর্মীর সংখ্যা মাত্র ১৫ শতাংশ। পার্কের ১৫টি ইউনিটই বন্ধ রয়েছে। মালিকদের আর্থিক সংকট এবং অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট বিভাগের মানবসম্পদ প্রধান খালিদ শাহরিয়ার বলেন, “আমরা কারখানা চালু করার চেষ্টা করছি, কিন্তু ব্যাংকগুলো এখন শতভাগ নগদ মার্জিন ছাড়া এলসি খুলছে না। বর্তমান আর্থিক অবস্থায় এটা করা সম্ভব নয়।”
ফলে একসময় বছরে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক উৎপাদন করা যন্ত্রপাতি এখন অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
সরকার বেক্সিমকো পার্কের কারখানাগুলো আবার চালু করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। শ্রম ও শিল্প খাতের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আজ একটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার শ্রমিক ও বেতনসংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করা হবে। এছাড়া সরকারী সুদবিহীন ঋণ সুবিধার অগ্রগতি নিয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
গাজী গ্রুপের রূপগঞ্জের টায়ার ও পাইপ কারখানাও গণঅভ্যুত্থানের পর আগুন ও ভাঙচুরে ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটি দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম জানান, “আগে যেখানে ১,৮০০ শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেখানে মাত্র ১৫০ জন কর্মরত। তবে আগামী পাঁচ–ছয় মাসে কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব।”
বেঙ্গল গ্রুপের দুটি প্লাস্টিক কারখানাও গত বছরের আগস্টে আগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “কারখানাগুলো আবার চালুর জন্য আমরা সরকারের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তবে এখনও প্রক্রিয়ায় দেরি রয়েছে।”
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অস্থিরতার সময় প্রায় ১০০টি কারখানা আগুন ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার মধ্যে অধিকাংশ ছিল পোশাক কারখানা। অনেক মালিক কারাগারে বা পালিয়ে গেছেন। ফলে কারখানাগুলো আইনি ও আর্থিক জটিলতায় আটকে আছে।
বিকেএমইএর মোহাম্মদ হাতেম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মালিক ও ব্যবসায়ী নেতারা একাধিকবার সরকারের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা চাইছেন কারখানাগুলো পুনরায় চালু হোক। আজকের শ্রম মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হবে।

