দেশের শিল্প ও অর্থনীতিতে তীব্র প্রভাব ফেলেছে গতকালকের অস্থিরতা। শত শত কারখানা বন্ধ, অনেক কারখানায় আগুন এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উৎপাদন এখন প্রায় শূন্যের কোটায়, আর বেকারত্ব বেড়েছে লাখ লাখ শ্রমিকের মধ্যে।
এ পরিস্থিতি শুধু কর্মসংস্থানের ওপর নয়, সাধারণ মানুষের জীবিকা ও বাজার চাহিদার ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কম খরচের সামর্থ্যহীনতা এবং ক্রয়ের বৈষম্য অর্থনীতির গতি স্থবির করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আয়েও।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, বাধ্যতামূলক ই-রিটার্ন জমা দেয়া ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭ জনের মধ্যে ৮৮ শতাংশ বা ১০ লাখ ২৫ হাজার ১০৯ জন কোনো কর দিতে পারেননি। অর্থাৎ ‘শূন্য কর’ দিয়েছেন। মাত্র ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯২৮ জন করদাতা ন্যূনতম কর দিয়েছেন। ফলে এ বছর আয়কর আদায় মাত্র ৮৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
পোশাক খাতের তথ্যও উদ্বেগজনক। দেশীয় পোশাক শিল্পে সরাসরি প্রায় ৪০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ জড়িত। তবে গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক বেকার। এ ছাড়া অন্যান্য শিল্পেও বহু কারখানা বন্ধ হওয়ায় করযোগ্য আয় কমেছে।
সাভারের একজন পোশাক শ্রমিক রবিউল হাসান বলেন, “গত অর্থবছরে আমি ন্যূনতম করের চেয়ে বেশি কর দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর কারখানা বন্ধ থাকায় শূন্য কর দিতে হয়েছে।” এমন উদাহরণ দেশে বহু মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
সিপিডি বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মন্তব্য করেছেন, “শূন্য করের সংখ্যা উচ্চ হলেও এর সব তথ্য সঠিক নাও হতে পারে। অনেকের আয়ের কম হওয়ার কারণে শূন্য কর প্রদত্ত হয়েছে। তবে এনবিআরকে এই তথ্য যাচাই করা উচিত।”
এ বছরের জন্য আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাধারণত শেষ সময়ে রিটার্ন জমার প্রবণতা থাকে। এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, “বহু নতুন করদাতা রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাঁরা স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। ফলে মোট জমা হওয়া রিটার্নের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বাড়বে।”
যদিও ই-রিটার্ন সিস্টেম অনেক সুবিধা দিয়েছে, তবে সার্ভার সমস্যা, ওটিপি দেরি, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং প্রিভিউ ডাউনলোডে সমস্যা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, শিল্প-অর্থনীতি ও কর আদায়ের এই পরিস্থিতি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

