সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার কাজটি এখন শেষ পর্যায়ে। বিষয়টি বেশ জটিল হলেও, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন—অন্তর্বর্তী সরকারই এই কাঠামো তৈরি করে দিয়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সরকার তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং দ্রুত বাস্তবায়নে যাবে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় বেতন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সাত-আট বছর ধরে কিছু হয়নি, এখন আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এতে ক্ষোভের কিছু নেই, বরং ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমরা চেষ্টা করছি অন্তত একটি শক্ত কাঠামো তৈরি করে যাই।”
তিনি জানান, কমিশনটি তিনটি খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছে—একটি বেসামরিক, একটি সামরিক এবং আরেকটি বিচার বিভাগীয় কাঠামো। তিনটি রিপোর্ট একসঙ্গে পাওয়ার পর পরস্পর সামঞ্জস্য যাচাই করা হবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সচিব কমিটি এবং অর্থ বিভাগ তা পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের ধাপ ঠিক করবে।
তবে সালেহউদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেন, “প্রশাসনিক প্রক্রিয়া জটিল, তাই আমাদের মেয়াদের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা কিছুটা অনিশ্চিত।”
গত ২৭ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-কমিশন গঠন করা হয়। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে ছয় মাসের মধ্যে এই কমিশনকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় নতুন কাঠামোর দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, রাজস্ব আয়ে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও সরকার বাজেট প্রক্ষেপণে বড় কোনো পরিবর্তন আনছে না। “আমরা শুধু প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সামান্য কমিয়েছি এবং মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে ধরেছি। তবে বাজেটের টাকার অঙ্কে বড় পরিবর্তন হবে না,” বলেন তিনি।
রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির প্রসঙ্গেও তিনি খোলাখুলি কথা বলেন। তাঁর ভাষায়, “এনবিআর টার্গেট মিস করছে বারবার। পেট্রোবাংলা ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া আদায়ের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাদেরও বাস্তবতা আছে—আমরা যে দামে জ্বালানি কিনি, সেই দামে বিক্রি করতে পারছে না। তাই প্রাইস অ্যাডজাস্ট করা কঠিন।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “রাজস্ব বাড়াতে আমরা নজর দিচ্ছি ট্যাক্স ফাঁকি ও লিকেজ রোধে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভারসাম্যও রাখতে হচ্ছে।”
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের খাদ্যসংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওদের তথ্যের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বাস্তবে বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় ভালো অবস্থায় আছে। আমরা ইতিমধ্যেই মজুত বাড়িয়েছি, ধান ও চালের দামও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছি, যাতে কৃষকও লাভবান হয় এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।”
অর্থ উপদেষ্টার ভাষায়, “আমরা চাই না কেউ ক্ষুধায় থাকুক। তাই একটু বাড়তি দামে হলেও মজুত রাখছি—দেশের জন্য, মানুষের জন্য।”

