কর্ণফুলী মোহনার অদূরে গুপ্তবাঁকের আগেই গড়ে উঠছে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল। বন্দর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থানগত সুবিধা টার্মিনালটিকে দ্রুতই চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকায় পরিণত করবে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী বছরে ১০ লাখ টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট (টিইইউ) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা ধরা হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চালু হলে প্রকৃত সক্ষমতা আরও বেশি হবে।
এই প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়ন হচ্ছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে মেয়াদ ৩৩ বছর। তবে নির্মাণ ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে ডেনমার্কের এপি-মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস কার্যত ৪৮ বছরের সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে মায়ের্সকের আধিপত্যের কারণে টার্মিনালটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের বড় অংশ লালদিয়ায় কেন্দ্রীভূত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সব মিলিয়ে এপিএম টার্মিনালসের জন্য গড়ে উঠেছে অত্যন্ত সুবিধাজনক আর্থিক কাঠামো। বছরে নয় লাখ টিইইউ ছাড়ালেই অতিরিক্ত কনটেইনারে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব কমে টিইইউ-প্রতি মাত্র ১০ ডলারে নেমে আসবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র এক দশকের মধ্যেই পুরো বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সুযোগ পাবে। অপারেটরের জন্য এত সুবিধা নিশ্চিত হলেও নেগোসিয়েশনে সমপর্যায়ের আর্থিক বা কৌশলগত সুবিধা আদায় করতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)।
চুক্তির নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এপিএম টার্মিনালস সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে তাদের শিপিং লাইনভিত্তিক ব্যবসার কারণে। তাদের নিজস্ব শিপিং লাইন ও কনটেইনার রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে এ প্রতিষ্ঠান অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। এই চুক্তি তাদের জন্য একটি ‘গ্যারান্টেড কাস্টমার বেজ’ নিশ্চিত করেছে। এটি এমন এক সুবিধা যা সাধারণত অন্য কোনো অপারেটর বাংলাদেশে পাবেন না। ২০৩০ সালের মধ্যে টার্মিনালে অপারেশন শুরু হওয়ার আগেই এই নিশ্চয়তা লালদিয়াকে ‘লো-রিস্ক, হাই-রিটার্ন’ মডেলে স্থাপন করেছে। সময় যত যাবে, অপারেটরের আয় তত বাড়বে, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর ‘সেট ফর্মুলা’ অনুযায়ী সীমিত রাজস্বই পাবে।
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় এপিএম টার্মিনালস দ্বিতীয় বিদেশী প্রতিষ্ঠান। এর আগে গত বছরের জুনে সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালস ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনায় যুক্ত হয়েছিল। ঢাকার অদূরে পানগাঁওতেও বিদেশী অপারেটর নিয়োগে চুক্তি হয়েছে, তবে সেটি মূলত নৌ-টার্মিনাল।
বিশ্লেষণে এসেছে পতেঙ্গা ও লালদিয়া চুক্তির মূল বিষয়। এতে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নেগোসিয়েশন কৌশলে দুটি চুক্তির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পিসিটিতে চবক শক্ত অবস্থান নিয়ে আরএসজিটিআইয়ের সঙ্গে ‘উইন-উইন’ কাঠামো নিশ্চিত করতে পেরেছে। কিন্তু লালদিয়ার ক্ষেত্রে ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তিতে চবকের সেই দৃঢ়তা দেখা যায়নি। রাজস্ব আহরণ, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত স্বার্থ, পে-ব্যাক সময়, বাজার প্রভাব ও টার্মিনালের অবস্থানগত সুবিধা মিলিয়ে এপিএম টার্মিনালস শক্তিশালী ভবিষ্যৎ বাজার নিশ্চিত করেছে। তুলনামূলকভাবে চবক সেখানে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) প্রতি টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) বর্তমানে ১৮ ডলার পায়। অন্যদিকে লালদিয়া টার্মিনালের ক্ষেত্রে সরকারি প্রচারণায় বলা হয়েছে, প্রথম স্ল্যাবে বছরে আট লাখ টিইইউ পর্যন্ত হ্যান্ডলিং হলে বন্দর পাবে ২১ ডলার প্রতি টিইইউ, আর দ্বিতীয় স্ল্যাবে আট-নয় লাখ টিইইউ হলে চবক পাবে ২২ ডলার। তবে চুক্তির নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আরও একটি স্ল্যাব রয়েছে, যা সরকারি প্রচারণায় উল্লেখ করা হয়নি। তৃতীয় স্ল্যাবে বলা আছে, এপিএম টার্মিনালস যদি বছরে নয় লাখ টিইইউ বেশি হ্যান্ডলিং করে, চবক অতিরিক্ত প্রতি টিইইউর জন্য পাবে মাত্র ১০ ডলার। অর্থাৎ, লালদিয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং নয় লাখ টিইইউ ছাড়ালে বন্দর রাজস্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। টার্মিনালের অবস্থানগত সুবিধা, জাহাজ আগমনের প্রবৃদ্ধি এবং এপিএম টার্মিনালসের বাজার নিয়ন্ত্রণ বিবেচনায় তৃতীয় স্ল্যাব কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে চবকের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্বার্থ সেখানে সংরক্ষিত থাকবে না।
এছাড়া এপিএম টার্মিনালসের পরোক্ষ লাভ আরও বেশি। তারা যদি সরাসরি ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে কনটেইনার জাহাজ সেবা চালু করতে পারে, তাহলে টার্মিনাল থেকে আয়ের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। মায়ের্সক লাইনের জাহাজ লালদিয়া টার্মিনালে অগ্রাধিকার পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে জাহাজ লম্বা সময় ধরে টার্মিনালে অপেক্ষা করবে না এবং দিনে ১০–১৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। নিজস্ব টার্মিনাল থাকায় এপিএম টার্মিনালসের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হবে।
সরকার বারবার জানিয়েছে, লালদিয়ায় টার্মিনাল নির্মাণ করে ৩০ বছর মেয়াদে এপিএম টার্মিনালস পরিচালনা করবে। শর্ত পূরণ হলে আরও ১৫ বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। শেষে সম্পূর্ণ সম্পত্তি সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে চুক্তির নথি ভিন্ন তথ্য দেখাচ্ছে। নথি অনুযায়ী, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ৪৮ বছর মেয়াদে এ অপারেটর পরিচালনা করবে। এর মধ্যে তিন বছর নির্মাণ, ৩০ বছর মূল পরিচালনা, এবং ১৫ বছরের বর্ধিত মেয়াদ রাখা হয়েছে। নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ‘ফিফটিন ইয়ার্স মাস্ট বি এক্সটেন্ডেবল’।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বিদেশী অপারেটরের সঙ্গে করা এ ধরনের চুক্তি সাধারণত ২০–২৫ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এর আগে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) আরএসজিটিআইয়ের সঙ্গে মোট ২২ বছরের চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দুই বছর নির্মাণ ও ২০ বছর অপারেশনাল। এপিএম টার্মিনালস ও চবকের উভয় কনসালট্যান্টের তথ্য অনুযায়ী, ৪৮ বছরের লালদিয়া চুক্তিতে ২০৩০ সালে বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু হলে মাত্র ১১ বছরে বিনিয়োগ ফেরত আসার সম্ভাবনা আছে। পিসটিতে ২২ বছরের চুক্তিতে পে-ব্যাক পিরিয়ড ধরা হয়েছিল ১৩ বছর। পে-ব্যাক পিরিয়ড বলতে বোঝায়, অপারেটর কত বছরে তার বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাবে। সহজ কথায়, কত সময়ে তারা নিজেই খরচ তুলবে এবং নিট প্রফিট শুরু করবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, ৩২ একর জমিতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ ও পরিচালনায় আরএসজিটিআইয়ের সঙ্গে চবকের চুক্তির দিনই আপফ্রন্ট ফি হিসেবে বন্দর পেয়েছিল ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার। এমনকি এই অর্থ নিশ্চিত করতে চুক্তির তারিখও চার দিন পিছিয়েছিল।
অপরদিকে ৪৯ একর গ্রিনফিল্ডে লালদিয়া টার্মিনালে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ১৭ নভেম্বর পিপিপির আওতায় কনসেশন চুক্তিতে আপফ্রন্ট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার। তবে এটি এখনও বন্দরের তহবিলে জমা হয়নি। চবক জানিয়েছে, চুক্তি ১৭ নভেম্বর হলেও কার্যকর হবে ৯০ দিনের পর। চুক্তি কার্যকর হওয়ার সময় আপফ্রন্ট ফির ৫০ শতাংশ বন্দর পাবেন, বাকি ৫০ শতাংশ পাবেন অপারেশন শুরু হওয়ার পর। তুলনায় বলা যায়, একই দিনে সম্পাদিত পানগাঁও নৌ-টার্মিনালের ২২ বছরের চুক্তিতে মেডলগ এসএ চুক্তির দিনই ১৮ কোটি টাকা দিয়েছে। আপফ্রন্ট ফি মূলত কনসেশন অধিকার মূল্য। এটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকার পাওয়ার জন্য চুক্তির শুরুতেই বিনিয়োগকারীর দেওয়া এককালীন অগ্রিম অর্থ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পর্ষদ সদস্য জাফর আলম বলেন, “বাংলাদেশের বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের অপারেটর অন্তর্ভুক্ত করা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে চুক্তির শুরু থেকে কার্যকর হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করা জরুরি। যাতে ভবিষ্যতে কোনো বড় আইনি জটিলতা না তৈরি হয়। চুক্তি ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো নেগোসিয়েশন। অভিজ্ঞ টিম প্রথমে রিস্ক চিহ্নিত করে এবং সেটি কমানোর কৌশল নির্ধারণ করে। চুক্তি তখনই স্বাক্ষরিত হয় যখন উভয় পক্ষ বাস্তব ‘উইন-উইন’ অবস্থানে পৌঁছায়।”
তিনি আরো বলেন, “এই কাঠামোয় বন্দরের প্রধান আর্থিক লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো আপফ্রন্ট মানি। এটি বিশ্বের সব কনসেশন মডেলের একটি সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। আপফ্রন্ট ফি চুক্তির পরবর্তী দেরি বা পিছুটান রোধ করে এবং শুরুতেই রাষ্ট্রের জন্য আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি শুরুতেই না নেওয়ার কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। পিসিটিতে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল চুক্তির দিনই ২০ মিলিয়ন ডলার আপফ্রন্ট ফি পরিশোধ করেছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই অর্থ তৎক্ষণাৎ ফিক্সড ডিপোজিটে রাখে। বছরে সুদের আকারে যে আর্থিক সুবিধা বন্দর পাচ্ছে, তা উল্লেখযোগ্য।” জাফর আলম আরও বলেন, আরএসজিটিআইয়ের ক্ষেত্রে কনসেশন চুক্তিতে বার্ষিক নির্ধারিত ফি থাকলেও লালদিয়া টার্মিনালে এফিসিয়েন্ট চুক্তিতে বার্ষিক ফি রাখা হয়নি। বন্দরের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে বার্ষিক ফি না রাখা অগ্রহণযোগ্য।
আরএসজিটিআই ও মেডলগ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দুটি বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় এজেন্টের পূর্ণ দায়দায়িত্ব দিয়েছে যথাক্রমে আরএসজিটি বাংলাদেশ ও মেডলগ এসএ বাংলাদেশ লিমিটেডকে। তারা ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশে যেকোনো দায়-দেনা বা ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব মূল প্রতিষ্ঠানই বহন করবে। অপরদিকে, এপিএম টার্মিনালস স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কিউএনএস লিমিটেডকে নির্বাচন করেছে। কিউএনএসের সঙ্গে যৌথভাবে কোম্পানি গঠন করবে এপিএম টার্মিনালস। তবে দায়দেনা ও ক্ষতিপূরণের কাঠামো এখনো স্পষ্ট নয়। কিউএনএস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নুরুল কাইয়ুম খান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ বলে ব্যবসায়ী মহলে পরিচিত। এছাড়া তিনি প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ দূতের সঙ্গেও পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার আছে।
অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “লালদিয়ার চুক্তির সব ক্লজ পরিষ্কার করা জরুরি। চুক্তি করার আগে এ ধরনের বিষয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ছিল। প্রথমত, চুক্তির আর্থিক দিক রয়েছে। দ্বিতীয়ত, কত সময় পরে এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। যখন শর্তগুলো বেশি গোপন রাখা হয়, তখন নানা ধরনের সন্দেহ ও আশঙ্কা তৈরি হয়। নেগোসিয়েশনটি এমন হতে পারত যে, টার্মিনাল নির্মাণের পর কত দিনে আমাদের হাতে আসবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। লালদিয়া নির্মাণের পর দীর্ঘ সময় অপারেটরের হাতে থাকবে।
আমরা জানেছি, এপিএম টার্মিনালস ৩০ বছর অপারেশনে থাকবে। সঙ্গে আরও ১৫ বছরের সুযোগ রাখা মানে এটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি। শুরু থেকেই অনেক তাড়াহুড়ো করে কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। দেশের আয় কত হবে এবং দেশের স্বার্থ কতটা সংরক্ষিত হয়েছে—এই বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করলে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয় এবং যে প্রশ্নগুলো উঠছে সেগুলোও নিরসন করা সম্ভব হয়।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “এ ধরনের চুক্তি করার আগে রাজনৈতিক দলসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যথাযথ আলোচনা করা হয়নি। আলাপ-আলোচনা ছাড়া এ ধরনের চুক্তিতে যাওয়া যুক্তিসংগত নয়। এখানে যেসব গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে, তা থেকে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে যে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে কিনা। এছাড়া এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা কোথায়?”
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক মনে করেন, এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তিতে বন্দর ভালো অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, “লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল একটি গ্রিনফিল্ড প্রকল্প। শুরু থেকে সবকিছু পরিচালনা করবে এপিএম টার্মিনালস। তাই নেগোসিয়েশন এবং চুক্তি সবকিছুতে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউরোপ থেকে আসা সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। এ অর্থ ধাপে ধাপে দেশে আসবে। লালদিয়া চালু হলে বড় জাহাজগুলো ভিড়বে এবং টার্ন অ্যারাউন্ড সময়ও কমে যাবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপারেটর সরাসরি ইউরোপে যাতায়াতের সুযোগও তৈরি করতে পারবে।”

