কর রেয়াত বলতে বোঝায়—বৈধ উপায়ে করের পরিমাণ কমানো বা কর কম দেওয়ার সুযোগ গ্রহণ। বিনিয়োগ বা দান হলো এই ধরনের কর রেয়াত পাওয়ার অন্যতম স্বীকৃত এবং বৈধ মাধ্যম।
প্রতি বছর জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত ১২ মাসের আয়ের ওপর কর নির্ধারিত হয়। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াতের সুবিধা নেওয়া যায়। তবে অনেকেই জানেন না কোন খাতে বিনিয়োগ করলে একদিকে মুনাফা অর্জন করা যায়, অন্যদিকে কর রেয়াতও পাওয়া সম্ভব। মূলত কর রেয়াতের জন্য বিনিয়োগের অনেক খাত রয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু খাত বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
১. জীবন বীমা: জীবন বীমা মূলত জীবন ও মৃত্যুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করা হয়। যদি কোনো করদাতা নিজের নামে জীবন বীমা গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন, তবে এই পরিশোধিত অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। এর ফলে কর রেয়াতের সুবিধাও মিলবে। তবে মনে রাখতে হবে—এই সুবিধা শুধুমাত্র জীবন বীমা-এর জন্য প্রযোজ্য। শিক্ষা বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, বৃত্তি বীমা, পেশাগত বীমা বা ঝুঁকিগত দুর্ঘটনা বীমা এর আওতায় পড়ে না।
২. প্রভিডেন্ট ফান্ড: সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সাধারণত অবসর গ্রহণের পর পেনশন সুবিধা পান। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সুযোগ নেই। তাই বেসরকারি খাতের কর্মীদের জন্য অবসরের পর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রভিডেন্ট ফান্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর বেতনের সাধারণত ৭ থেকে ১৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা হয়। একইভাবে নিয়োগকর্তাও সমপরিমাণ অর্থ ওই তহবিলে যোগ করেন। কর্মী ও নিয়োগকর্তার এই সম্মিলিত সঞ্চয়ই প্রভিডেন্ট ফান্ড। এই তহবিলে জমাকৃত অর্থের ওপর যে সুদ আসে, তার বিপরীতেও কর রেয়াতের সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. সঞ্চয়পত্র: সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের অন্যতম জনপ্রিয় খাত। এই খাতে বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ কর রেয়াতের সুবিধা পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্রকে নিরাপদ সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুনাফা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় মানুষের বিনিয়োগের আগ্রহও স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে। বাংলাদেশ সরকার সঞ্চয়পত্র ইস্যু করে। তাই মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং মুনাফা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। এছাড়াও এ খাতে কর রেয়াতের সুবিধাও পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, কারও বার্ষিক আয় যদি ৮ লাখ টাকা হয় এবং তিনি তার আয়ের ১০ শতাংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন, তবে তিনি প্রদেয় করের ওপর সর্বোচ্চ কর রেয়াত লাভ করবেন।
৪. ডিপিএস: ডিপিএস বিনিয়োগের অন্যতম সুপরিচিত খাত। এতে টাকা জমা রাখলে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হয় এবং এর মাধ্যমে কর রেয়াতের সুবিধা পাওয়া যায়। প্রতি মাসে ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়। নির্ধারিত সময় শেষে একটি ভালো অঙ্কের সঞ্চিত অর্থ হাতে আসে। এই পুরো সঞ্চয়কে বিনিয়োগ হিসেবে ধরে নিয়ে কর রেয়াতের সুবিধা নেওয়া সম্ভব।
৫. ট্রেজারি বন্ড ও শেয়ার: ট্রেজারি বন্ড এবং শেয়ারে বিনিয়োগ করেও কর রেয়াতের সুবিধা পাওয়া যায়। ট্রেজারি বন্ড-এ বিনিয়োগ করলে নিরাপদ মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকে। এই বন্ড কিনতে হবে বাংলাদেশ সরকারের ইস্যুকৃত ব্যাংক বা শেয়ারবাজারের মাধ্যমে। ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে কর রেয়াতের সর্বোচ্চ সীমা ৫ লাখ টাকা।
শেয়ার-বাজারে বিনিয়োগ করলে লাভের সম্ভাবনা থাকে। বিনিয়োগ করতে হবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কিনে। কেউ যদি গত বছরের শেয়ার বিক্রি করে নতুন শেয়ার কিনেন, তবে এই বছরের অতিরিক্ত বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াতের সুবিধা পাওয়া যাবে। শেয়ারে বিনিয়োগের বড় সুবিধা হলো—এখানে কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। অর্থাৎ যত খুশি বিনিয়োগ করা যায়, তত কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

