দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার হিসাবেও গ্যাসের ঘাটতি থেকে বের হতে পারছে না পেট্রোবাংলা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে প্রতিবছরই বিপুল ঘাটতি দেখা দেবে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঘাটতির কারণে ভবিষ্যতে বিদ্যুতায়ন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি সরবরাহ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এই খাত যদি বিকল্প জ্বালানি নিশ্চিত করতে না পারে, সাধারণ মানুষও এর প্রভাব সহ্য করতে হবে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় খনিগুলো থেকে দৈনিক ১৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং এলএনজি আমদানি থেকে ১০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে দৈনিক ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতির কথা বলা হলেও, এলএনজি সরবরাহ সব সময় নিশ্চিত হয় না। তাই বাস্তবে ঘাটতি আরও বেশি। পরিকল্পনায় দেখা গেছে, ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে চাহিদা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে যথাক্রমে দৈনিক ৩৮৫০ ও ৩৮৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ বাড়ানো না হলে ঘাটতি হবে ৯২৫ এবং ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ঘাটতি মেটাতে দেশীয় খনি থেকে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য অন্তত ১০০টি নতুন কূপ খনন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৭ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত দেশীয় খনি থেকে সরবরাহ বাড়বে অন্তত ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে এলএনজি সরবরাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বাড়বে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৮-২৯ সালে চাহিদা ৩৮৭৫ এবং ৩৯২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হবে। ঘাটতি যথাক্রমে ৮৭৫ ও ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট থাকবে।
২০৩০-৩১ সালে মহেশখালীতে নতুন একটি এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে এলএনজি সরবরাহ দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়বে। দেশীয় সরবরাহ আরও ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়ে ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট হবে। তখন গ্যাসের চাহিদা ৩৯৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট, ঘাটতি নেমে আসবে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। সরকার ভোলা-বরিশাল ও মহেশখালী থেকে নতুন পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী দুই বছরের সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, ২০৩১-৩৫ সালের মধ্যে দেশীয় গ্যাস ও এলএনজি সরবরাহ তেমন বাড়েনি। কিন্তু চাহিদা প্রতিবছর ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট করে বাড়ানো হয়েছে। ফলে ঘাটতি ৫৫০ থেকে ৫৭৫ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে থাকবে। বিগত সরকার গ্যাস ঘাটতি বিবেচনা না করে এককভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। মেঘনাঘাটে চারটি ৪৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং খুলনায় ৮০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র চালু হয়েছে। পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করেই এসব কেন্দ্র তৈরি হওয়ায় বিদ্যুৎ ও শিল্পে গ্যাসের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা বলেন, ‘চাহিদা ও সরবরাহের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিকট ভবিষ্যতে সংকট কাটানো সম্ভব হবে না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলছেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা এখন অনিশ্চিত। উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান শক্তিশালী করা যেতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদেশি কোম্পানি ডেকে কাজ করা হলো। আগের সরকারের মতো বর্তমান সরকারও এই খাতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানি করা হলে শিল্প ও বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাবে, এবং শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষই তার দাম বহন করবে।’

