বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় তুলা আমদানিকারক দেশ—আর এই তুলার ওপরই দাঁড়িয়ে আছে দেশের বিশাল পোশাক শিল্প। এত দিন ভারতই ছিল বাংলাদেশে তুলা সরবরাহের প্রধান উৎস। কিন্তু এবার সেই অবস্থান পাল্টে গেছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতকে পেছনে ফেলে তুলা রপ্তানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে ব্রাজিল।
ইউএসডিএর তথ্য বলছে, ২০২৪–২৫ বিপণনবর্ষে বাংলাদেশ মোট ৮ দশমিক ২৮ মিলিয়ন বেল কাঁচা তুলা আমদানি করেছে। এর মধ্যে একাই ব্রাজিল দিয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন বেল—অর্থাৎ মোট চাহিদার প্রায় ২৩ শতাংশ। ভারতের সরবরাহ ছিল ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন বেল, যা তালিকার দ্বিতীয় অবস্থান। এরপর রয়েছে আফ্রিকার বেনিন ও ক্যামেরুন, আর পঞ্চম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলার প্রতিযোগিতামূলক দাম, ফসল কাটার সময় ব্যাপক সরবরাহ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার কারণে ব্রাজিলের তুলা এখন বাংলাদেশি স্পিনারদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে। যদিও আগের বছর পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল—২০২৩–২৪ বিপণনবর্ষে ভারতই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তুলা সরবরাহকারী; সরবরাহ করেছিল ১ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন বেল। দ্রুত শিপমেন্টের সুবিধার কারণে কলকাতা ও বেনাপোল সীমান্ত পথ ব্যবহার করেই বাংলাদেশি আমদানিকারকরা ভারতীয় তুলা আনতেন, যদিও দাম তুলনামূলক বেশি ছিল এবং মান নিয়ে অভিযোগও ছিল।
চলতি বছরে তুলা আমদানি আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। ২০২৪–২৫ বিপণনবর্ষে আমদানি যেখানে ছিল ৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন বেল, সেখানে ২০২৫–২৬ মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন বেলে। স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোতে তুলার চাহিদা বাড়ায় আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। ২০২৪ সালে তুলা আমদানি ছিল ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন বেল, অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বেশ খানিকটা বৃদ্ধি হয়েছে।
ইউএসডিএ বলছে, জুলাইয়ের আন্দোলনের পর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরুর দিকে গার্মেন্টস কারখানাগুলোর উৎপাদনে কিছুটা ধাক্কা থাকলেও বছরের অবশিষ্ট সময়ে তুলা আমদানির প্রবাহ মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল।
বাংলাদেশে কাঁচা তুলার উৎপাদন খুবই সীমিত। জমির সংকট এবং তুলা উৎপাদনে দীর্ঘ সময় লাগায় দেশের বার্ষিক উৎপাদন একই জায়গায় প্রায় আটকে আছে—প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার বেল। মাত্র ৪৫–৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হওয়ায় উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগও কম।
টেক্সটাইল শিল্প বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন বেল তুলা ব্যবহার করতে পারে, যদি কাঁচামাল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে এর প্রায় অর্ধেক—২০২৪–২৫ মৌসুমে ব্যবহার ছিল ৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন বেল। আগামি মৌসুমে তা সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন বেল হতে পারে বলে অনুমান।
স্পিনিং শিল্পে তুলা দিয়ে সুতা ও মিশ্র সুতা তৈরি হয়। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের সুতার উৎপাদন ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টনে যেতে পারে। তুলা আমদানি ও ব্যবহারের পরিমাণ বাড়লেও পোশাকশিল্প এখনো প্রচুর পরিমাণে সুতা ও কাপড় বিদেশ থেকে আমদানি করছে।
ভারত এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুতা সরবরাহকারী। বড় স্পিনিং মিল, দ্রুত পরিবহন সুবিধা এবং তুলনামূলক কম খরচের জন্য ভারতীয় সূতার চাহিদা বেশি। আর কাপড়ের ক্ষেত্রে চীনই শীর্ষে—পরে আছে পাকিস্তান ও ভারত।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় উৎপাদন কম আর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশের তুলা ও সুতা আমদানি আরও দীর্ঘ সময় ধরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতেই থাকবে।

