চীনের নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে (আরসেপ) যুক্ত হতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে সম্মত হয়েছে। সম্প্রতি দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে এই তথ্য জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাঠামো (টিফা) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে ‘আরসেপ’।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রথম সহকারী সচিব সারাহ স্টোরি।
বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেক্সটাইল, উল ও কটন, জুট, লেদার, খনিজ পদার্থ, এলএনজি, কৃষি সহযোগিতা, শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ প্ল্যান এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা হবে।

বিশেষভাবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ প্ল্যান ২০২৫-২০৩০-এর আওতায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া, উল খাতেও অস্ট্রেলিয়া বিস্তারিত আলোচনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
সরকারের এক কর্মকর্তা জানান, আরসেপ বর্তমানে একটি লাভজনক বাণিজ্য ব্লক। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এতে যোগদানের চেষ্টা করছে। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে রাজি হয়েছে এবং এই সমর্থন নভেম্বরেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এবার বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকবে।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, আরসেপে যোগদান বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারপূর্ণ। এটি ফরেন অফিস কনসালটেশন ও টিফা বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় হবে। বাংলাদেশ বর্তমানে কোনো শক্তিশালী বাণিজ্য ব্লকে নেই। পূর্বের ‘সাফটা’ চুক্তি কার্যকর হয়নি এবং ‘বিমসটেক’ও কার্যকরী নয়। তাই আরসেপ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরসেপকে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি আসিয়ান দেশ ও পাঁচটি এফটিএ সহযোগী (নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া) রয়েছে। ২০১১ সালে খসড়া নীতিমালা তৈরির সময় ভারতেরও সদস্যপদ ছিল, তবে ২০১৯ সালে ভারত আরসেপ থেকে বের হয়ে যায়।
সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আরসেপে যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের প্রয়োজন হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবেদন দেবে। তবে ভারতের আপত্তির কারণে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর হয়নি।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণ করবে। এ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ২০২৯ পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক শুল্কসুবিধা (জিএসপি) দেবে কি না, তা এখনও যাচাই করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে আশাবাদী হলেও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে অস্ট্রেলিয়ার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা জরুরি।

