দীর্ঘ স্থবিরতার পর আবারও সজীব হয়ে উঠছে রাজশাহী হাইটেক পার্ক। নতুন করে দেশি ও বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ শুরু হওয়ায় পার্ককে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন অর্থনৈতিক গতি। এতে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়নেও তৈরি হয়েছে আশাব্যঞ্জক পরিবেশ।
পার্ক–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এতদিন খালি পড়ে থাকা আটটি বাণিজ্যিক প্লট এখন পুরোপুরি লিজ হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত বিনিয়োগ এসেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক থেকে। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ বছরের জন্য এক একর জমি নিয়ে অত্যাধুনিক গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করেছে। একই সময়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান অগ্নিসিস্টেম নতুন প্লট দখল নিয়েছে এবং ব্র্যাক-আইটি দুই একর জায়গায় কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারে প্রাণ-আরএফএলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোট ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট স্পেস ভাড়া নিয়েছে।
ভর্তুকিনির্ভর আয়-ব্যয়ে ঘাটতি, তবে সামনে আশার আলো
বর্তমানে হাইটেক পার্কের মাসিক আয় মাত্র ২ লাখ টাকা। ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ থেকেই এই আয় আসে। বিপরীতে ব্যয় ৮ লাখ টাকার বেশি হওয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষের আশা, নতুন বছর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হলে ঘাটতি অনেকটাই কমে যাবে।
পার্কের উপপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আগে ৮টি প্লটই খালি ছিল। এখন সাতটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কাজ করছে। সিলিকন টাওয়ারেও ১৯টি কোম্পানিকে স্পেস দেওয়া হয়েছে। অনেকে কাজ শুরু করেছে, অনেকে অফিস সাজাচ্ছে।’
অবকাঠামো ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
উদ্যোক্তারা জানান, অবকাঠামো দুর্বলতা ও নিরাপত্তা ঘাটতি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সংস্কার ও নিরাপত্তা জোরদার প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়লেও নিরাপত্তা, পরিবেশ ও ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে আছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
রাজ আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আক্তারুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘এখনো সিকিউরিটি ক্যামেরা নেই। বিদ্যুৎ ব্যাকআপ দুর্বল। মাঝে মাঝে লোডশেডিং হয়। হাইটেক পার্কে এসব হওয়া উচিত নয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ ছাড়া টেকসই হাইটেক পার্ক গড়ে ওঠে না। তাই দ্রুত সমাধান জরুরি।’
রাজশাহীর জন্য বড় সম্ভাবনার দুয়ার
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ তরুণ কর্মসংস্থানের খোঁজে নামেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিকল্পিতভাবে কাজ এগোলে রাজশাহী হাইটেক পার্কে অন্তত ১৪ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘হাইটেক পার্ক ও বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করতে পারলে শক্তিশালী মানবসম্পদ তৈরি হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সব সময় চাকরি খোঁজে। পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো আমন্ত্রণ জানালে আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

