সরকার এ বছর আমন মৌসুমে ধান–চালের মূল্য বাড়ালেও সংগ্রহ অভিযানে তেমন গতি দেখা যাচ্ছে না। প্রায় ২৫ দিন পার হলেও লক্ষ্য অনুযায়ী সংগ্রহ হয়নি—আতপ চালের মাত্র ৫.৩৬ শতাংশ, সেদ্ধ চালের ৪৬.৭৪ শতাংশ এবং ধানের মাত্র ৪.৬৩ শতাংশ সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ।
দাম বাড়ল, কিন্তু সাড়া কম
২০২৫–২৬ অর্থবছরে সরকার প্রতি কেজি আতপ চালের দাম ৪৯ টাকা, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা এবং ধান ৩৪ টাকা ঠিক করেছে। আগের বছর এই দাম ছিল আতপ ৪৬, সেদ্ধ ৪৭ আর ধান ৩৩ টাকা। অর্থাৎ আতপ–সেদ্ধ চালে ৩ টাকা এবং ধানে ১ টাকা বেড়েছে।
দাম বাড়ানো হলে সরকার আশা করেছিল সংগ্রহ হবে বেশি। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা বলছে—সাড়া এখনো তেমন জোরালো নয়।
চট্টগ্রামে সংগ্রহ ধীরগতি
১৫ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামে ধান–চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এ বছর জেলায় সংগ্রহের লক্ষ্য—
-
আতপ চাল: ৭,২৯৬ মেট্রিক টন
-
সেদ্ধ চাল: ১০৭ মেট্রিক টন
-
ধান: ১,৫২০ মেট্রিক টন
৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত—
-
আতপ চাল: ৩৯১ টন
-
সেদ্ধ চাল: ৫০ টন
-
ধান: ৭০ টন
অর্থাৎ লক্ষ্যের তুলনায় সংগ্রহের হার আশানুরূপ নয়।
খাদ্য গুদামগুলোতে (সিএসডি ও এলএসডি) ইতোমধ্যে কিছু চাল–ধান মজুত হয়েছে। আতপ চাল সংগ্রহের জন্য ১১৪টি মিল এবং সেদ্ধ চালের জন্য একটি মিলের সঙ্গে চুক্তি করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
কোথায় কত সংগ্রহ হলো
-
হালিশহর সিএসডি: ১৪৫ টন আতপ
-
মিরসরাই এলএসডি: ৯৭ টন আতপ
-
নাজিরহাট এলএসডি: ২০ টন আতপ, ৫০ টন সেদ্ধ, ৪৯ টন ধান
-
লোহাগাড়া এলএসডি: ৩০ টন আতপ
-
চানপুরঘাট এলএসডি: ৯৯ টন আতপ
-
সন্দ্বীপ এলএসডি: ১৫ টন ধান
-
রাউজান এলএসডি: ৬ টন ধান
সংগ্রহ কেন পিছিয়ে?
জেলা খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, কৃষকের অনীহার প্রধান কারণ পদ্ধতির ঝামেলা। ধান–চাল গুদামে নিয়ে যাওয়া, গাড়িভাড়া, সময় নষ্ট হওয়া, আর্দ্রতার কারণে মাল ফেরত যাওয়ার ঝুঁকি—এসবই কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে।
উপরন্তু, বাজারে ভালো দাম পাওয়া গেলে কৃষকেরা স্বাভাবিকভাবেই মিলারদের কাছে ফসল বিক্রি করতে চান। আর সরকারের কাছে বিক্রি করলে সঙ্গে সঙ্গে নগদ টাকা পাওয়া যায় না—ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরে টাকা আসে। এত ঝামেলায় যেতে অনেকে অনিচ্ছুক।
সাতকানিয়ার কৃষক মো. সাইফুদ্দিন বলেন, “গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক ঝামেলা। ঠিকমতো শুকনা না হলে নেয় না। আবার দূরত্ব বেশি হওয়ায় গাড়িভাড়াও বেড়ে যায়। তাই আমরা স্থানীয় মিলারদের কাছেই ধান বিক্রি করি।”
সরকারের আশাবাদ এখনো আছে
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন—এই অভিযানে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ডিসেম্বরের মধ্যেই বড় অংশের সংগ্রহ সম্পন্ন করতে হবে, কারণ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন থাকায় মাঠ প্রশাসন ব্যস্ত থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা রাজীব কুমার দে জানান, “সংগ্রহ চলছে। দাম বাড়ানো হয়েছে, সাড়া আরও বাড়বে বলে আশা করছি। আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।”

