মহাকাশে যাত্রার ছয় বছর পর অবশেষে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে দেশের প্রথম মহাকাশ স্যাটেলাইট বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১। যেটি নিয়ে একসময় বিস্তর বিতর্ক ছিল, সেই স্যাটেলাইটই এবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো কোম্পানিকে ৩৮.৩৫ কোটি টাকা নিট লাভ এনে দিয়েছে—এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মুনাফা এসেছে স্যাটেলাইটের সক্ষমতার মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করেই।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) গত ১ ডিসেম্বর তাদের নিরীক্ষিত হিসাব অনুমোদন করেছে। সেখানেই দেখা যায়, টানা কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে অবশেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত এক বছরে আয় বেড়েছে ৯.২৪ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ১৮৭.০৭ কোটি টাকা। আয়ের প্রধান উৎস—দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন, ডিটিএইচ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যান্ডউইথ বিক্রি।
স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকলেও বর্তমানে শুধুমাত্র ২৬টি বাণিজ্যিকভাবে সক্রিয়।
বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাদুর রহমান বলেন, অব্যবহৃত ক্যাপাসিটি দেশে-বিদেশে বিক্রি করতে বিশেষ বাণিজ্যিক টিম কাজ করছে। সেবার মান বাড়ানো, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, এবং ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা রক্ষা—এসব মিলেই কোম্পানিকে টেকসই অবস্থানে ফিরিয়ে এনেছে।
তবে এখনও স্যাটেলাইটের সক্ষমতার ৫০ শতাংশই ব্যবহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ৮০ শতাংশ ব্যবহারকে সফল ধরা হয়। তাই বিএসসিএলের লক্ষ্য—এই ব্যবহার হারকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
স্টারলিংকের অনুমোদিত রিসেলার হওয়া বিএসসিএলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে। ইমাদুর রহমান মনে করেন, সঠিকভাবে এগোতে পারলে এই অংশীদারিত্ব তাদের সামগ্রিক ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করবে।
চলতি বছরের লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাতে কিছু বিশেষ কারণও ভূমিকা রেখেছে।
প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটি ২.৬১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। আবার এফডিআর ও ব্যাংক আমানতের সুদ থেকে পাওয়া আয়ে অপরিচালন মুনাফা ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮.০৬ কোটি টাকা—যা নিট মুনাফা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রচলিত সম্প্রচার সেবার বাইরে এখন বিএসসিএল স্যাটেলাইটভিত্তিক ডেটা সংযোগ, নৌ ও বিমান যোগাযোগ, জরুরি যোগাযোগ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার জন্য কাস্টমাইজড সল্যুশন দিচ্ছে। টেকসই আয়ের জন্য সার্ভিসের এই বহুমুখীকরণকে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।
দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে—যার লক্ষ্য দক্ষ স্যাটেলাইট প্রকৌশলী ও মহাকাশ প্রযুক্তিবিদ তৈরি করা।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএসসিএল ২০১৮ সালে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকে বাণিজ্যিক কাজে সম্পৃক্ত।
এখন তাদের নজর বাংলাদেশ স্যাটেলাইট–২—যা আবহাওয়া পূর্বাভাস, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রিমোট সেন্সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

